রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎ নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য, মূল্যসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব

প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২৫, ২১:৫৩ | অনলাইন সংস্করণ

  ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি

দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরের বিদ্যুৎ হবে নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য, মূল্যসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব—এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানির (এনপিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জায়েদুল হাসান। কেন্দ্রটি উৎপাদনে এলে দীর্ঘ সময় ধরে নিরবচ্ছিন্ন ও কম খরচে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে, যা অন্য কোনো উৎসের মাধ্যমে সম্ভব নয় বলে তিনি জানিয়েছেন।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে বর্তমানে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রায় ৪৩৩ কিলোওয়াট-আওয়ার।

উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশের পর্যায়ে যেতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ৮০০ কিলোওয়াট-আওয়ার এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ১,৫০০ কিলোওয়াট-আওয়ারে উন্নীত করা প্রয়োজন। কারণ মাথাপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহারই নির্ধারণ করে একটি দেশ কতটা উন্নত। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিদ্যুতের প্রভাব থাকায় নিরবচ্ছিন্ন ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎই উন্নয়নযাত্রাকে গতিশীল রাখার প্রধান শর্ত।

শনিবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে এনপিসিবিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জায়েদুল হাসান বলেন, নিরাপত্তা, নির্ভরযোগ্যতা, সাশ্রয়ী ব্যয় ও পরিবেশবান্ধব বৈশিষ্ট্যের কারণে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি মিশ্রণে পারমাণবিক শক্তির গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে।

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালন ব্যয় যে কোনো জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক প্লান্টের তুলনায় কম। একটি পারমাণবিক প্লান্টের আয়ুষ্কাল ৬০ বছর, যা ৮০ কিংবা কোনো ক্ষেত্রে ১০০ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যায়। বিপরীতে জীবাশ্ম জ্বালানির প্লান্টের আয়ুষ্কাল সর্বোচ্চ ২৫ বছর। ফলে প্রাথমিক নির্মাণ ব্যয় তুলনামূলক বেশি হলেও দীর্ঘমেয়াদে পারমাণবিক শক্তিই সবচেয়ে লাভজনক উৎস।

ঢাকাস্থ পারমাণবিক তথ্য কেন্দ্রের ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার তীর্থ দাস বলেন, সৌরশক্তি নবায়নযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব হলেও একে একমাত্র বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। সৌরশক্তির তাত্ত্বিক দক্ষতা সীমা মাত্র ৩৩.১৬ শতাংশ, বাস্তবে তা আরও কম। রূপপুর প্রকল্পের সমপরিমাণ জায়গায় সৌর প্যানেল বসানো হলে মাত্র ৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব, অথচ রূপপুরের সক্ষমতা ২,৪০০ মেগাওয়াট। ফলে জমি ব্যবহারের দিক থেকে এ দুই উৎস তুলনাযোগ্য নয়।

তিনি আরও বলেন, ধুলা, ধোঁয়া, শিলাবৃষ্টি, ঝড় এবং সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির কারণে সৌর প্যানেলের কার্যকারিতা দ্রুত নষ্ট হয়। প্যানেল অকেজো হয়ে গেলে তা নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্থা দেশে নেই, ফলে সেগুলো থেকে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী বিষাক্ত উপাদান। অন্যদিকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশে যে অপূরণীয় ক্ষতি সৃষ্টি করে, তা পুষিয়ে নিতে বিদ্যুতের ইউনিটমূল্য আরও বাড়তে বাধ্য।

তীর্থ দাস বলেন, “নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় বেশি হলেও দীর্ঘ একশ বছরের হিসাবে বিবেচনা করলে পারমাণবিক বিদ্যুৎই সবচেয়ে লাভজনক ও টেকসই সমাধান।”