ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২ পক্ষের গোলাগুলিতে সাবেক ছাত্রদল কর্মী নিহত

প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:২৯ | অনলাইন সংস্করণ

  ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ফের দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে সাদ্দাম হোসেন (৩৫) নামে সদর উপজেলার সাবেক এক ছাত্রদল কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে জেলা শহরের কান্দিপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত সাদ্দাম ওই এলাকার মো. মোস্তফা কামাল ওরফে মস্তু মিয়ার ছেলে।

নিহতের পরিবার অভিযোগ করে জানায়, বুধবার সন্ধ্যায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কান্দিপাড়ার মোড় এলাকার পপুলার প্রেস এলাকার লায়ন শাকিল গ্রুপের লোকজন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন দিলীপ গ্রুপের তিনজনকে গুলি করে আহত করে। এনিয়ে এলাকায় উত্তেজনা চলছিল। মধ্যরাতে দিলীপ ও তার সহযোগীরা তাদের অনুসারী সাদ্দামকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর খবর আসে সাদ্দাম গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সড়কে পড়ে আছে। পরে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মূলত প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই দিলীপ ও তার সহযোগীরা সাদ্দামকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

নিহত সাদ্দামের পিতা মো. মোস্তফা কামলা মস্তু মিয়া বলেন, আমার ছেলে সাদ্দাম জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন দিলিপ এর অনুসারী। কিন্তু গতকাল সন্ধ্যায় লায়ন শাকিল ও দিলীপ গ্রুপের গোলাগুলির ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা চলছিল। রাতে দিলিপ, বাবুল ও পলাশ আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর দিলীপ জানায় সাদ্দাম গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের জিজ্ঞেস করলে দিলীপ জানায় লায়ন শাকিল তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তারা পালাতে চেষ্টা করে এ সময় সাদ্দাম পড়ে গিয়ে গুলিব্ধি হয়। কিন্তু আমার প্রশ্ন যদি পালাতে গিয়ে গুলিব্ধি হয় তাহলে পিঠে গুলি লাগার কথা। কিন্তু তার বুকে গুলি লেগেছে এবং তার ঘাড়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রযেছে। আমি মনে করি দিলীপ প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজহারুল ইসলাম জানান, রাত ২টার দিকে আমরা গোলাগুলির খবর পাই। পরে ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে গিয়ে দেখি সাদ্দাম বুক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় এবং ঘাড়ে কোপের দাগ রয়েছে। মূলত সন্ধ্যায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কান্দিপাড়ার দিলীপ ও শাকিল গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলছে। এর জেরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কারা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ ঘটনার তদন্ত করেছে। এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।

জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন দিলীপ অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তিনি সাদ্দামকে ডেকে নিয়ে যাননি। বরং সাদ্দাম তার সাথেই ছিলেন। রাতে সদর উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক লায়ন শাকিল তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে সাদ্দাম গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। একটি মহল তাকে রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করতে তার বিরুদ্ধে এই অপপ্রচার চালাচ্ছে।

এদিকে স্থানীয়রা জানান, হঠাৎ করেই শান্ত থাকা কান্দিপাড়া এলাকায় আবারও অস্ত্রের ঝনঝনানি শোনা যাচ্ছে। এ অবস্থায় এলাকায় বেশ আতঙ্ক রয়েছে। তাই দ্রুত অভিযানের মাধ্যমে এবং অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসনের জোরালো হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন তারা।

এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শহররের কান্দিপাড়া মাদরাসা রোডে স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন দিলীপ গ্রুপের সঙ্গে স্থানীয় লায়ন শাকিল গ্রুপের মধ্যে পূর্ববিরোধের জেরে লায়ন শাকিলের নেতৃত্বে দিলীপ গ্রুপের লোকজনের ওপর গুলি চালায়। এতে টুটুল (৩৫), সোয়েব (২৫),সাজু (২৩) গুলিবিদ্ধ হন।