নির্দেশনা মেনেই কাল থেকে পর্যটকদের জন্য খুলছে সেন্টমার্টিন

প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২৫, ২১:৩২ | অনলাইন সংস্করণ

  কক্সবাজার অফিস

আগামীকাল সোমবার (১ ডিসেম্বর) থেকে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে দেশের একমাত্র প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন। দেশি-বিদেশী পর্যটকদের ঘুরে বেড়ানোর জন্য পছন্দের এ দ্বীপে দীর্ঘ ১০ মাস পর পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে।

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে দৈনিক দুই হাজার করে পর্যটক রাতে থাকার সুযোগ পাবেন। তবে এ সময়ে পর্যটকদের ১২ নির্দেশনা মেনে চলতে হবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

বঙ্গোপসাগরের বুকে অবস্থিত আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের সেন্টমার্টিনে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যটকদের যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। সরকার দ্বীপের পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় গত বছর থেকে পর্যটক সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্তের আলোকে নভেম্বর থেকে জানুয়ারি—এই তিন মাস দ্বীপে পর্যটকরা ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছেন।

জাহাজ মালিক ও পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতের কারণে ২০২৩ সাল থেকে টেকনাফের দমদমিয়া ঘাট থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এরপর মেরিনড্রাইভ সড়কের ইনানীর নৌবাহিনীর জেটিঘাট দিয়ে জাহাজ চলাচল করেছিল। গত বছর থেকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ’র জেটিঘাট থেকে সাগরপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করে আসছিল।

চলতি বছরও এই ঘাট দিয়ে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাহাজ মালিকদের সংগঠন ‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’-এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর। তিনি বলেন, ১ নভেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাওয়ার অনুমতি থাকলেও রাতযাপনের অনুমতি ছিল না। ফলে পর্যাপ্ত পর্যটক বা যাত্রী না থাকায় জাহাজ চলাচল করেনি। গত বছরের মতো ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে জাহাজ চলাচলের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গত বছর দুই মাসে এক লাখের বেশি পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করেছেন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম জানান, জেলা প্রশাসন থেকে এমভি কর্ণফুলি এক্সপ্রেস, এমভি বারো আউলিয়া, কেয়ারি সিন্দাবাদ এবং কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন—এ চারটি জাহাজ সেন্টমার্টিন–কক্সবাজার নৌরুটে চলাচলের অনুমতি পেয়েছে।

মানতে হবে যে ১২ নির্দেশনা

নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সেন্টমার্টিন ভ্রমণে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ১২টি নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। এসব নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিআইডব্লিউটিএ এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্টমার্টিনে চলাচল করতে পারবে না।

পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে এবং প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকবে। রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি করা বা বারবিকিউ পার্টি আয়োজন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রি করা এবং সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ কোনো জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা যাবে না। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যান চলাচলও নিষিদ্ধ থাকবে।

একই সঙ্গে নিষিদ্ধ পলিথিন ও একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক বহন করা যাবে না এবং ৫০০ ও ১০০০ মিলিলিটারের প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার না করার জন্য পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, সেন্টমার্টিনের পরিবেশ–প্রতিবেশ রক্ষায় সরকারের জারি করা এসব নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন কাজ করবে।