ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নার্সেস এসোসিয়েশনের শাটডাউন, রোগীদের চরম ভোগান্তি
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:১৭ | অনলাইন সংস্করণ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

স্বতন্ত্র নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরকে ভিন্ন অধিদপ্তরে একীভূত করার চেষ্টা বন্ধ এবং জাতীয় নার্সিং কমিশন গঠনসহ আট দফা দাবিতে প্রতীকী শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশন (বিএনএ) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখা।
রোববার (৩০ নভেম্বর) ২৫০ শয্যা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এসময় তারা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কার্যালয়ের পাশে নার্স ও মিডওয়াইফরা একত্রিত হয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন।
রোববার সকাল ১০টা থেকে ২৫০ শয্যা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে এই কর্মসূচির ফলে ভর্তিকৃত রোগীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তবে গাইনী ও প্রসূতি ওয়ার্ড, জরুরি বিভাগ, অস্ত্রোপচার কক্ষ, এস.সি.এ.এন.ইউ বিভাগ, কার্ডিওলজি বিভাগ এই কর্মসূচির আওতার বাইরে ছিল। শাটডাউন যে সকল ওয়ার্ডে পালন করা হচ্ছে সেসব ওয়ার্ডের রোগীর সেবার জন্য ১৭ সদস্য বিশিষ্ট ইমার্জেন্সি স্কোয়াড গঠন করে সেবা চালু রেখেছে।
২৫০ শয্যা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আক্তার হোসেন বলেন, নার্সদের শাট-ডাউন দেওয়াতে ইনডোর সেবা প্রদানে মারাত্মক বিঘ্ন হচ্ছে। সকাল ১০টায় ওয়ার্ডে রাউন্ড দিতে গিয়ে নার্সদের পাওয়া যাচ্ছে না। মারাত্মক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। তাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানাই।
বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশনের (বিএনএ) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সভাপতি মোসাম্মৎ কোহিনুর বেগম, আমাদের দাবিগুলো মানা না হলে আগামী ২ ডিসেম্বর কমপ্লিট শাট-ডাউন অব্যাহত থাকবে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাছিমা বেগম বলেন, স্বাস্থ্যকে আমাদের ৫০% নার্স অধিকারের জন্য কেন আন্দোলন করতে হবে। আজকে দুই ঘন্টার শাট ডাউনের কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ২ ডিসেম্বর মঙ্গলবার থেকে আমাদের কঠোরভাবে শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
২৫০ শয্যা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. শাখাওয়াত হোসেন রাগান্বিত হয়ে বলেন, এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে পারবো না। যা ইচ্ছা তা লিখে দেন।
২৫০ শয্যা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে আড়াই থেকে তিন হাজার রোগী সেবা নেয়। হাসপাতালে প্রায় ৫ শতাধিক রোগী ভর্তি রয়েছে বিভিন্ন ওয়ার্ডে।
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার জন্য আজ সোমবার (১ ডিসেম্বর) সোমবার পূর্বে দেয়া কর্মসূচি স্থগিত করেছে। দাবি মানা না হলে আগামীকাল মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) থেকে কমপ্লিট শাটডাউনে যাবে বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশন।
আন্দোলনকারী নার্সদের অন্য দাবিগুলো হল— অবিলম্বে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর কর্তৃক প্রস্তাবিত নিয়োগবিধি, অর্গানোগ্রাম, স্ট্যান্ডার্ড সেট-আপ এবং ক্যারিয়ার প্যাথ অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। নার্সদের পরবর্তী উচ্চতর পদগুলোতে (৯ম থেকে ৪র্থ গ্রেড) ভূতাপেক্ষভাবে পদ প্রমার্জনের মাধ্যমে পদোন্নতিসহ সুপার নিউমারারী পদোন্নতি দিতে হবে। অবিলম্বে নার্সিং সুপারভাইজার এবং নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর পদগুলো ৯ম গ্রেডে উন্নীত করতে হবে। ডিপ্লোমা নার্স-মিডওয়াইফদের সনদকে স্নাতক (পাশ) সমমান দিতে হবে এবং সকল গ্র্যাজুয়েট নার্স-মিডওয়াইফদের জন্য প্রফেশনাল বিসিএস চালু করতে হবে। বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা এবং নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নার্স নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট নিয়োগ-বিধি ও মানসম্মত বেতন কাঠামো তৈরি করতে হবে এবং অপ্রশিক্ষিত ও নিবন্ধনবিহীন ভুয়া নার্স-মিডওয়াইফদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নার্স-মিডওয়াইফদের ঝুঁকিভাতা প্রদানসহ নার্সদের উপর জোরপূর্বক বিগত সরকারের চাপিয়ে দেওয়া নার্সিং ইউনিফর্ম পরিবর্তন করতে হবে এবং শয্যা, রোগী ও চিকিৎসক অনুপাতে নার্স-মিডওয়াইফদের পদ সৃজন ও নিয়োগ দিতে হবে।
