দুর্গাপুরে সেচ পাম্প প্রকল্পে ঘুষকাণ্ড, কৃষি অফিসারের বিরুদ্ধে তদন্ত
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:৫২ | অনলাইন সংস্করণ
দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি

নেত্রকোনার দুর্গাপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিনামূল্যে প্রণোদনার আওতায় ফ্লাড রিকনস্ট্রাকশন ইমার্জেন্সি অ্যাসিসট্যান্স প্রজেক্টের সোলার সেচ পাম্প প্রকল্পের একজন গ্রাহকের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. রায়হানুল হকের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী কৃষক হলেন উপজেলার চন্ডিগর ইউনিয়নের ফেচিয়া গ্রামের মৃত আকবর আলীর ছেলে মো. আলাল মিয়া (৩৮)।
ঘুষের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আমিরুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গত রোববার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে তদন্ত দল উপজেলা কৃষি অফিসে এসে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য গ্রহণসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করেন। ভুক্তভোগী এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়, ময়মনসিংহ অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ড. সালমা লাইজুর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগীর ফুফাতো ভাই হাসান আলী। ওই অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায়।
বর্তমানে উপজেলা কৃষি অফিসার নিপা বিশ্বাস মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে আছেন অতিরিক্ত কৃষি অফিসার মো. রায়হানুল হক। গত ছয় মাসে তার দায়িত্বকালীন সময়ে কৃষি অফিসটি অনিয়ম–দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কৃষক আলাল মিয়া এক প্রতিবেশীর সুপারিশে বিনামূল্যে সোলার সেচ পাম্প প্রকল্পের আওতায় আসেন। তখন চন্ডিগর ইউনিয়নের সাবেক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন জায়গা নির্ধারণ করে দেন। পরে শেরফা পাওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নির্মাণকাজ শুরু করে এবং অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হয়। এসময় বিভিন্ন অজুহাতে ভারপ্রাপ্ত কৃষি অফিসার রায়হানুল হক কৃষকের ভাই হাসানের মাধ্যমে ১ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন।
অভিযোগ রয়েছে, তিন ধাপে কৌশলে তিনি ৫০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। গত ১০ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে সোনালী ব্যাংক পূর্বধলা শাখায় (অ্যাকাউন্ট নং ৩৫১৪৭০১০০০১৮১) ২০ হাজার টাকা জমা দেওয়ার একটি ব্যাংক স্টেটমেন্ট ভুক্তভোগীর হাতে রয়েছে। বাকি ৫০ হাজার টাকার জন্যও তিনি চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। টাকা দিতে না পেরে শেষ পর্যন্ত হাসান লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
এছাড়াও দায়িত্ব পালনের সময় বরাদ্দকৃত সরকারি মোটরসাইকেল (মেট্রো ম্যাক্স) তিন মাস ধরে একজন বহিরাগতকে দিয়ে ব্যবহার করানোর অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় একাধিক ডিলারের কাছ থেকে নিজের প্রতিষ্ঠিত মাদরাসায় “দান” নেওয়ার অভিযোগও অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে।
অভিযোগকারী হাসান আলী বলেন, অসচ্ছ প্রক্রিয়ায় লক্ষাধিক টাকা ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি তদন্ত করে উপজেলা কৃষি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. রায়হানুল হকের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তারা শতভাগ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কাজ সম্পন্নের দাবি জানান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আমিরুল ইসলাম অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সোলার সেচ পাম্প উন্নয়ন প্রকল্পে ঘুষ গ্রহণের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পরিচালক ড. সালমা লাইজু বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. রায়হানুল হকের বিরুদ্ধে ১ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা ঘটনাস্থলে তদন্ত করছেন। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্য অভিযোগগুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটিকে সেগুলো লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে।
