চুয়াডাঙ্গায় আমনের বাম্পার ফলনেও কৃষকের হাসি মলিন

প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:৪৪ | অনলাইন সংস্করণ

  শরীফ উদ্দীন, চুয়াডাঙ্গা

চুয়াডাঙ্গায় এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। মাঠে-ঘাটে-উঠানে সোনারঙা ধান হাসছে। তবে শ্রমে-ঘামে ফলানো ধান নিয়ে বাজারে গেলে কৃষকের হাসি মলিন হয়ে যাচ্ছে। ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া কৃষকের জীবনে অতিপরিচিত ঘটনা, এবং এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।

শীতের সকালের সূর্য ওঠার আগেই কাস্তে হাতে মাঠে ছুটছেন কৃষক। চুয়াডাঙ্গার জেলা জুড়ে চলছে আমন জাতের ধান কাটা ও মাড়াই, বিক্রয় নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। এ বছর বড় দুর্যোগ না হওয়ায় আশানুরূপ ফলনও হয়েছে।

জেলার বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে মৌসুমের নতুন ধান। প্রতি মণ ধানের দাম মিলছে ৯৫০ থেকে ১০৫০ টাকা পর্যন্ত। তবে কৃষকরা বলছেন, এ মৌসুমে উৎপাদন ভালো হলেও বাজারে ধানের দাম খুবই কম।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত চাল মজুদ থাকায় এ বছর ধানের দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় মাঠে মাঠে চলছে এখন আমন ধান কাটার উৎসব। পুরোদমে চলছে মাড়াই এবং নতুন ধান ঘরে তোলার কর্মযজ্ঞ। বিনা ধান ১৭, ব্রি ধান ৭৫ ও ব্রি ধান ১০৩-এর ভালো ফলন হয়েছে জেলার চারটি উপজেলায়। প্রতি বিঘা জমিতে অন্তত ২৪ থেকে ২৬ মণ পর্যন্ত ধানের ফলন হয়েছে এ বছর।

এলাকার প্রান্তিক ও বর্গাচাষিরা ঋণ পরিশোধ ও দৈনন্দিন খরচ মেটাতে মৌসুমের শুরুতেই বাজারে ৯৫০ থেকে ১০৫০ টাকা মণে ধান বিক্রি করছেন। বীজ, সার, কীটনাশক, ডিজেলসহ কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধিতে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে, তাতে নতুন ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচও উঠছে না, দাবি কৃষকদের।

তারা বলেন, বিঘাপ্রতি ১২–১৩ হাজার টাকা মালিককে দিয়েছেন, পানি খরচ ৪ হাজার টাকা, চাষ-রোপণ-কর্তনের খরচ মিলিয়ে তাদের আয় আসছে না।

এ বছর আমন ধানের ফলন ভালো হলেও গত মাসের বৃষ্টির কারণে অনেক ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জমিতে পানি জমে যাওয়ায় ধান কাটতেও কষ্ট হচ্ছে।

কৃষকরা বলছেন, ধানের জন্য যে খরচ করছেন, তা তুলতে পারছেন না। চুয়াডাঙ্গা জেলার বাজারগুলোতে মোটা ধান বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ থেকে ৯৮০ টাকায়। চিকন ধানের মধ্যে স্বর্ণা, রঞ্জিত বিক্রি হচ্ছে ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকায়। পাইজাম জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১২৫০ টাকায়, যা পরবর্তীতে কুষ্টিয়া ও আশপাশের বড় মিল মালিকদের কাছে চলে যায়।

কার্পাসডাঙ্গার কৃষক শাহিন মিয়া বলেন, “প্রতি এক বিঘা জমিতে অন্তত ২৪–২৬ মণ ধান হয়েছে। বর্তমান বাজারে ৯৫০ টাকা মণ। চলিত মৌসুমে বর্গা নিয়ে আবাদে খরচ প্রায় ১৮–২২ হাজার টাকা। এতে বিঘাপ্রতি ২–৩ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। নিজের পরিশ্রম ও মজুরি ছাড়াই এই লোকসান আমরা দিচ্ছি।”

চলতি আমন মৌসুমে ধান কাটতে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। দ্বিগুণ পারিশ্রমিক দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যায়নি, জানিয়েছেন কৃষকরা।

কুড়ুলগাছি গ্রামের কৃষক জাকার আলী বলেন, “এ মৌসুমে সার, বীজ ও কীটনাশকের দাম অনেক বেশি ছিল। যে দামে ধান বিক্রি করছি, তাতে খরচও উঠছে না। এ বছর আমন চাষে লোকসান হবে।”

ধান ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, “বর্তমান ধানের বাজার দর দেখে কৃষকের লাভ হচ্ছে না। মোকাম থেকে যে দাম নির্ধারণ করা হয়, আমরা সেই দামে ধান কিনতে বাধ্য। আগে ধানের দাম ১,৩০০–১,৪০০ টাকা ছিল, এবার সেই দাম পাওয়া যাচ্ছে না।”

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, “এ মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগবালাই কম থাকায় আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে। চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গা জেলার চারটি উপজেলায় ৩৬,৭৮১ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ধানের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১,২৯,৫৪৬ মেট্রিক টন। আগাম কর্তন করা ধান জমিতে কৃষকরা শীতকালীন স্বল্পমেয়াদের ফসল যেমন ভুট্টা, গম, সরিষা আবাদ করে বাড়তি আয় করতে পারবে। আমরা এ বিষয়ে কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিয়ে সাহায্য করে যাচ্ছি।”