আমদানির ঘোষণাতেই পেঁয়াজের দাম কমলো কেজিতে ৩০ টাকা
প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:২১ | অনলাইন সংস্করণ
আলমাস আলী, ঈশ্বরদী (পাবনা)

সরকার পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দেওয়ার পরদিনই রোববার (৭ ডিসেম্বর) পাবনার ঈশ্বরদীর হাট-বাজারে মুড়ি কাটা পেঁয়াজ খুচরায় কেজি ৩০ টাকা কমে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একদিন আগে (শনিবার ও শুক্রবার) খুচরায় এই পেঁয়াজ কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়।
শনিবার সন্ধ্যায় সরকার পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দেয়, যা আজ (রোববার) থেকেই কার্যকর হবে। এই আমদানির ঘোষণাতেই বাজারে এই (মুড়ি কাটা) পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে, খুচরায় দামও কেজিতে ৩০ টাকা কমে ৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যদিও দেশি পুরাতন পেঁয়াজ হাটবাজারে আগের মতোই নেই বললেই চলে।
রোববার ঈশ্বরদী শহর ও বাইরের হাট বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবারে পাইকারি প্রতি কেজি মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৭০ টাকায় কিনে প্রতি কেজি ৮০ টাকা দরে বিক্রি করেন। তার পরদিন শুক্রবার হঠাৎ অস্থির হয়ে ওঠে পেঁয়াজের দাম। বেশিরভাগ হাট-বাজারেই দেশি পুরাতন পেঁয়াজ মার্কেট থেকে উধাও।
ঈশ্বরদীর বিভিন্ন হাট বাজারে খুচরা বিক্রেতারা জানান, বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) আমরা দেশি পুরাতন পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রয় করেছি। অথচ একদিনের ব্যবধানে শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে দেখি পাইকারি মার্কেটে দেশি পুরাতন পেঁয়াজ নেই, কারো কাছে থাকলেও পাইকারিতেই ১৫০ টাকা দাম চাচ্ছেন। এই দামে কিনে কোন কোন খুচরা বিক্রেতা ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন। অপরদিকে সদ্য বাজারে ওঠা মুড়িকাটা পেঁয়াজ বৃহস্পতিবারে পাইকারি দর ছিল প্রতি কেজি ৭০ টাকা। খুচরায় বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৮০ টাকা। শুক্রবার সেই মুড়ি কাটা পেঁয়াজ পাইকারি প্রতি কেজি কিনতে হয়েছে মানভেদে ১০৫ টাকা থেকে ১১০ টাকায়। আমরা খুচরাতে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। খুচরা বাজারে এক দিনের ব্যবধানে পুরাতন দেশি ও মুড়িকাটা উভয় পেঁয়াজের দামই কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে মুড়িকাটা ১২০ টাকা ও দেশি পুরাতন পেঁয়াজ ১৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে থাকে। শনিবারেও যার দাম অপরিবর্তিত থাকে।
কাঁচা বাজারের আড়তদার এবং ব্যবসায়ী, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা দাবি করেন, ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ থাকায় দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ বেড়েছে। ডিসেম্বরে এসে মৌসুমের শেষ সময় চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমায় বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। মূলত দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ সংকটের কারণে দাম বাড়ছে। অন্যদিকে আগাম রোপণ করা মুড়ি কাটা পেঁয়াজ প্রথম দফা বৃষ্টিতে বেশির ভাগই নষ্ট হওয়ায় কৃষকদের নতুন করে দ্বিতীয় বার পেঁয়াজ রোপণ করতে হয়েছে। এতেও দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ বাড়ে। সামান্য কিছু মুড়ি কাটা পেঁয়াজ বাজারে আসলেও তা পর্যাপ্ত নয়।
রোববার উপজেলার আরামবাড়িয়া বাজারের কাঁচামালের ব্যবসায়ী মিলন, খোকন ও আনসার আলী বলেন, মুড়ি কাটা পেঁয়াজ কেজিতে ৩০ টাকা কমে ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তারা বলছেন, ঈশ্বরদী বাজার ও গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ হাট-বাজারেই দেশি পুরাতন পেঁয়াজ মার্কেট থেকে উধাও। চলতি ডিসেম্বরের শেষার্ধে কিংবা জানুয়ারির শুরুতে দেশে মুড়ি কাটা পেঁয়াজের উত্তোলন মৌসুম শুরু হবে। এখন আগাম কিছু মুড়ি কাটা পেঁয়াজ বাজারে আসলেও তা পর্যাপ্ত নয়। ফলে আগামী অন্তত এক মাস দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ ধারাবাহিকভাবে কমবে। এ কারণে চলতি মাস পেঁয়াজের বাজার চড়া থাকে। তবে সরকার পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দেওয়ায় সরবরাহ বেড়ে দাম কমছে, এমনটাই থাকবে বলেই তাদের ধারণা।
তারা বলেন, দেশে দুই ধাপে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। রবি মৌসুমের শুরুতে পেঁয়াজের চারা (মুড়িকাটা) রোপণ করা হয়। এ জাতের পেঁয়াজ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় না। উৎপাদন মৌসুমেই এসব পেঁয়াজ বিক্রি ও ভোগ করে সাধারণ ভোক্তারা। মুড়ি কাটা পেঁয়াজ উত্তোলন শেষ হলে একই জমিতে কৃষক হালি বা বীজ পেঁয়াজ রোপণ করেন। এ পেঁয়াজ মাচা বা বিভিন্ন স্থানে সংরক্ষণ ঘরে দীর্ঘদিন মজুদ রাখা হয়। এতে বাজার দেশীয় উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল হয়েছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল মমিন বলেন, এবার অতিবৃষ্টির কারণে কৃষকের আগাম মুড়ি কাটা পেঁয়াজ পর্যাপ্ত পরিমাণে বাজারে আসেনি। কাঁচামালের দাম একসময় কম আর এক সময় বেশি হয়।
