চুয়াডাঙ্গায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব, হাসপাতালে ৭০ ভাগই শিশু

প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:৩২ | অনলাইন সংস্করণ

  শরীফ উদ্দীন, চুয়াডাঙ্গা

চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন শিশুরা। গত ১০ দিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালেই শিশুসহ এক হাজার ৭০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া প্রতিদিন হাসপাতালের আউটডোরে আরও ৩০০–৪০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, তবে অভিভাবকদের সচেতন হওয়াই সবচেয়ে জরুরি। শীতের শুরুতে আবহাওয়া পরিবর্তন এবং স্বাস্থ্যবিধি অবহেলা করাই ডায়রিয়া বিস্তারের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডগুলোর ধারণক্ষমতার তুলনায় রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। পর্যাপ্ত বেড না থাকায় অনেক শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ককে ঠান্ডা মেঝেতেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, ১ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৭০ জন। ১৪ ডিসেম্বরই ১০৯ জন ভর্তি হয়েছে। ওয়ার্ডগুলো তিল পরিমাণ জায়গা ছাড়া ভর্তি রোগী নিয়ে ভরা। শীতের এই সময়ে মেঝেতে বসে অসুস্থ শিশুদের সঙ্গে থাকা মায়েদের জন্য চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।

ডায়রিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর মা শাহিনা খাতুন বলেন, দুই বছরের ছেলের হঠাৎ বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসেন। কিন্তু এসে দেখেন কোনো বেড খালি নেই, ঠান্ডা মেঝেতেই শিশুকে নিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। আরেক অভিভাবক মর্জিনা খাতুন জানান, রাতে শীত বেশি থাকায় মেঝেতে শিশুকে রাখা খুব কষ্টের, তবে কোনো উপায় নেই।

চিকিৎসক ও নার্সদেরও রোগীর অতিরিক্ত চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দায়িত্বে থাকা একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স বলেন, শীতের শুরুতেই ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পায়। জনবল সীমিত হলেও দিনরাত অক্লান্তভাবে সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন জানান, রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। একই সঙ্গে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়া বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, তবে অভিভাবকদের সচেতন থাকা জরুরি।

ডায়রিয়া নিজেই মারাত্মক নয়, তবে সময়মতো চিকিৎসা না দিলে পানিশূন্যতা শিশুর জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে। রোটা ভাইরাসজনিত হওয়ায় অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর নয়। চিকিৎসার মূল ভরসা ওরাল স্যালাইন। শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না, ছয় মাসের বেশি বয়সী শিশুদের নরম খাবার, কাঁচা কলা ভর্তা ও ডালের পানি খাওয়ানো উচিত। প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর স্যালাইন দেওয়া বাধ্যতামূলক।

ডা. খোকন আরও বলেন, এখনই সচেতন না হলে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে সামান্য অবহেলাও মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।