কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে বোরো আবাদে ব্যস্ত কৃষক

প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:১৫ | অনলাইন সংস্করণ

  কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে এখন বোরো ধানের বীজতলা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। চলতি বছর সঠিক সময়ে পানি নেমে যাওয়ায়, পাশাপাশি চলছে ধানের চারা রোপণের জন্য জমি তৈরির কাজও। তবে সার ও ডিজেলের দাম বেশি থাকায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার দুশ্চিন্তায় কৃষক। সঠিক পরামর্শ দিয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে কৃষি বিভাগ।

কিশোরগঞ্জে প্রায় দেড় হাজার বর্গকিলোমিটার হাওরাঞ্চলে এখন চলছে বোরো আবাদের প্রস্তুতি। কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন বোরো ধানের বীজতলার পরিচর্যায়।

নিয়ম করে সনাতন পদ্ধতিতে বীজতলায় দিচ্ছেন পানি। পাশাপাশি ছিটিয়ে যাচ্ছেন সারও। এতে করে বীজতলা ইতোমধ্যেই সবুজে সবুজে একাকার। চলতি মৌসুমে হাওরের পানি সঠিক সময়ে নেমে যাওয়ায় ধানের চারা রোপণের জন্য জমি তৈরিরও ধুম লেগেছে।

প্রতি বছর এ মৌসুমে প্রস্তুতি নেওয়া হয় বোরো ধান আবাদের। এবারও বোরো আবাদের প্রস্তুতি নিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা।

নিকলী হাওরের কৃষক রমজান আলী বলেন, “এবার হাওরের পানি সময়মতো নেমেছে। জমি তৈরি করছি। বীজতলা করেছি, চারা ঠিকমতো বড় হচ্ছে। সময়মতো রোপণ করবো। আশা করি ভালো ফসল পাবো।”

ইটনা কুনিয়ার হাওরের কৃষক জামাল মিয়া বলেন, “৬ কেজি ধানের বীজতলা করেছি। রোপণের জন্য জমি তৈরি করছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে রোপণ করবো দুই কানি জমিতে।”

হাওরাঞ্চলে বোরো ধান ফলাতে গিয়ে প্রতি বছর পোকামাকড়ের আক্রমণ এবং আগাম বন্যা নিয়ে চিন্তিত থাকেন চাষীরা। এ বছর বীজধান এবং সার-ডিজেলের দাম বেশি থাকায় যোগ হয়েছে বাড়তি চিন্তা।

মিঠামইন হাওরের কৃষক আবদুল জলিল বলেন, “সরকার বলে সারের দাম কমিয়েছে, খুচরা দোকান থেকে কিনতে হয় প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দিয়ে। আমরা বোরো চাষ করে লাভ পাই না।”

অষ্টগ্রাম হাওরের কৃষক বকুল মমিয়া বলেন, “সার ও ডিজেলের দাম বাড়তি, বোরো আবাদ করে আমাদের পোষায় না। সরকার যদি এসবের দাম কমিয়ে দিত, তাহলে লাভের মুখ দেখতে পারতাম।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডক্টর সাদিকুর রহমান বলেন, “চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় আট হাজার হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা করা হয়েছে। এতে রয়েছে হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের ধান। চাষীদের পাশে থেকে বোরো আবাদের সকল পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর হাওরাঞ্চলের বীজতলার অবস্থা অত্যন্ত সুন্দর। চারা খুব ভালো হচ্ছে। বোরো আবাদের জন্য জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ সার মজুদ আছে। কৃষক যাতে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে সার পায়, সেজন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মনিটরিং কার্যক্রম অত্যন্ত জোরদার করা হয়েছে। বোরো আবাদ শেষ হওয়া পর্যন্ত এ মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে ইনশাল্লাহ।”

চলতি মৌসুমে জেলায় এক লাখ ৬৮ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওরেই আবাদ হবে এক লাখ চার হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে।