রংপুরে ২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ফুলকপি, বিপাকে চাষিরা
প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০:৫৭ | অনলাইন সংস্করণ
রংপুর ব্যুরো

রংপুরের বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে ফুলকপি, রসুন ও কাঁচামরিচ-সহ কিছু সবজির দাম। সেইসঙ্গে দাম কমেছে রসুনের। ফুলকপির দাম কমে যাওয়ায় চাষিরা পড়েছেন বিপাকে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফুলকপির দাম এতটাই কমে গেছে যে, উৎপাদন খরচও উঠছে না। প্রতি পিস ফুলকপি ২-৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা চাষিদের জন্য লোকসান।
রংপুর নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৩০ টাকা। এছাড়া পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ১০৫-১১০ টাকা। আর পাতা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে গত সপ্তাহের মতোই ৫০-৬০ টাকা।
সবজি বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি টমেটো ১৬০-১৮০ টাকা থেকে কমে ১০০-১২০ টাকা, গাজর ১৮০-২০০ টাকা থেকে কমে ৭০-৮০ টাকা, ঝিংগা গত সপ্তাহের মতো ৫০-৬০, মুলা ৩০-৩৫ টাকা, ফুলকপি ৬০-৭০ টাকা থেকে কমে ৪০-৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০-৫০ টাকা থেকে কমে ৩০-৪০ টাকা, চালকুমড়া (আকারভেদে) আগের মতো ৪০-৫০ টাকা, কাঁচকলার হালি ২০-২৫ টাকা, দুদকুষি ৪০-৫০ টাকা, চিকন বেগুন ৫০-৬০ টাকা, গোল বেগুন ৮০-১০০, ঢ্যাঁড়স ৫০-৬০ টাকা, পটলের দাম কমে ৪০-৫০ টাকা, বরবটি আগের মতোই ৭০-৮০ টাকা, শিম ১০০-১১০ থেকে কমে ৭০-৮০ টাকা, পেঁপে আগের মতো ২০-২৫ টাকা, শসা ৫০-৬০ টাকা, করলা ৮০-৯০ টাকা থেকে কমে ৭০-৮০ টাকা, লাউ (আকারভেদে) ৫০-৬০ টাকা, কচুরলতি ৫০-৬০ টাকা, কচুর বই ৩০-৪০ টাকা, লেবুর হালি ১৫-২০ টাকা, প্রতিকেজি ধনেপাতা ৮০-১০০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে, দেশি আদা ১২০-১৪০ টাকা, আমদানি করা আদা ১৪০ টাকা, দেশি রসুনের দাম কমে ১০০-১২০ টাকা থেকে হয়েছে ৮০-১০০ টাকা, আমদানি করা রসুন ১৮০-২০০ টাকা, শুকনা মরিচ আগের মতো ৩৫০-৪০০ টাকা এবং প্রকারভেদে শাকের আঁটি ১৫ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কামাল কাছনা বাজারের সবজি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, দুই সপ্তাহ আগের তুলনায় আজ কিছু সবজির দাম কমেছে। মাসের শুরুতে ঝড়-বৃষ্টির কারণে সবজি বাজারে প্রভাব পড়েছিল। এখন শীতকালীন সবজির সরবরাহ বেড়েছে। আশা করা হচ্ছে, সামনে আরও দাম কমবে। এদিকে পোলট্রি মুরগির ডিমের হালি গত সপ্তাহের মতোই দোকান ভেদে ৩৮-৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে কার্ডিনাল আলু গত সপ্তাহের মতোই ২২-২৫ টাকা, শিল আলু ৪০-৪৫ টাকা, ঝাউ আলু ৩৫-৪০ টাকা, দেশি সাদা আলু ২৫-৩০ টাকা এবং বগুড়ার লাল পাগড়ি ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুরগির বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগি গত সপ্তাহের মতোই ১৬০-১৭০ টাকা, পাকিস্তানি সোনালি মুরগি ২৮০-৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০-৫৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে গরুর মাংস অপরিবর্তিত ৭২০-৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বাজারে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল আগের মতো ১৮৫-১৯০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল ১৮০-২০০ টাকা, মসুর ডাল (চিকন) ১৫০-১৬০ টাকা, মাঝারি ১০০-১১০ টাকা, মুগডাল ১৬০-১৮০ টাকা, বুটের ডাল ১২০-১৩০ টাকা, খোলা চিনি ১০০-১১০ টাকা, ছোলাবুট ১০০-১১০ টাকা, প্যাকেট আটা ৫৫ টাকা, খোলা আটা ৪৫-৫০ টাকা এবং ময়দা ৬৫-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের মতোই স্বর্ণা (মোটা) ৪৮-৫০ টাকা, স্বর্ণা (চিকন) ৫৮-৬০ টাকা, বিআর২৮- ৭০-৭৫ টাকা, বিআর২৯- ৬০-৬৫ টাকা, জিরাশাইল ৭২-৭৫ টাকা, মিনিকেট ৮২-৮৫ এবং নাজিরশাইল ৮৫-৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, আকারভেদে রুইমাছ ৩০০-৩৮০ টাকা, টেংরা ৪০০-৫৬০ টাকা, মৃগেল ২২০-২৫০ টাকা, কারপু ২৫০-২৬০ টাকা, পাঙাশ ১৫০-২০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০-২৫০, কাতল ৩০০-৫০০ টাকা, বাটা ১৮০-২৪০ টাকা, শিং ৩০০-৪০০ টাকা, সিলভার কার্প ১৮০-২৬০ টাকা এবং গছিমাছ ৮০০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
পীরগঞ্জে ১৫টি ইউনিয়নের অধিক হাড়ে সবজি চাষ করা হয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষক অধিক জমির লাভের আশায় ফুল ও বাঁধাকপির চাষ করে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে। সবজি চাষের শুরুতেই ২০ থেকে ২৫ টাকা প্রতি পিস বিক্রি করা হয়েছে এবং জমি থেকে পাতাসহ। শীতকালীন সকল সবজি একসাথে বাজারে আমদানি হওয়ার কারণে অনেকটাই কাঁচামালের গড়াগড়ি দেখা দিয়েছে এলাকার হাটবাজারগুলোতে, বলছেন স্থানীয় চাষিরা।
ফুলকপি চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মৌসুমের শুরুতে ফুলকপির দাম ভালো ছিল, কিন্তু এখন বাজারে ফুলকপির সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমে গেছে। এছাড়া কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধিও চাষিদের জন্য সমস্যা তৈরি করছে। কাঁচামালের দাম কম হলে ক্রেতা মেলা না হাটবাজারে। আবাদ করতে গিয়ে একটি কপির গাছের পিছনে প্রায় ৪/৫ টাকা খরচ হয়েছে। এখন বিক্রি করা হচ্ছে ২/৩ টাকা দরে। সবজি চাষের যাবতীয় সার কীটনাশক বাড়তি দামে কিনে সবজি চাষ করে ঋণের বোঝা টানতে হচ্ছে।
পীরগঞ্জ উপজেলার ১টি পৌরসভা এবং ১৫টি ইউনিয়নের অধিকাংশ লোকজন কৃষি কাজের ওপর নির্ভর করে। এখানে চাষিরা প্রতিবছর ধান, পাটসহ সকল সবজির চাষ অনায়াসে হয়ে থাকে এবং কৃষি মাঠে প্রচুর ফসল উৎপাদন হয়।
চাষাবাদের দিক থেকে এখানকার চাষিরা ঊর্ধ্বমুখী এবং সবার সেরা। উপজেলার কৃষি মাঠের সকল সবজি চাষ সমান হাড়ে চাষাবাদ করা হলে লোকসানের বোঝা টানতে হতো না চাষিদের। কোনো ফসলের বাজার চাঙা হলে চাষিরা একযোগে সেই ফসলের চাষাবাদ ঝুঁকে পড়ে, যে কারণে সবজির গড়াগড়ি বলছেন এলাকার সচেতন মহল।
ফুলকপির দাম বাড়বে কবে, বা চাষিরা কীভাবে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বিষয়টি নিয়ে চাষিদের প্রশ্ন। জামালপুর গ্রামের কপি চাষি এমামুল হক আকন্দ জানান, লাভের হিসাব বাদ, এখন চাষাবাদের সার কীটনাশকের খরচ তোলাই কঠিন হয়ে পড়েছে। বাজারে কীটনাশক দোকানগুলো থেকে বাকি নিয়ে কপির চাষ করা হয়েছে, বর্তমানে সেই দোকানের বাকি টাকাও দেওয়া যাচ্ছে না।
আবহাওয়া অনুকূলে ছিল, চাষিরা একসাথে অনেক জমিতে বা (মাঠে) কপির চাষ করা হয়েছে আবার ফলনও ভালো হয়েছে। সারা দেশেই এখন ফুলকপি এবং শীতকালীন সবজি একসাথে বাজারে আমদানি শুরু হয়েছে। সেই কারণে কিছুটা সবজির বাজার কমেছে। তবে দুই এক সপ্তাহের মধ্যেই সবজির বাজার কিছুটা বাড়তে পারে বলে উপজেলা কৃষি বিভাগের লোকজন জানিয়েছে।
কৃষকদের জমি থেকে প্রতি পিস ফুলকপি ৩ টাকা পিস জমি থেকে কেনা হলেও লেবার গাড়ি খরচসহ ঢাকায় পৌছা পর্যন্ত ১০ টাকা পরে। অথচ মোকামেই কপির বাজার ভালো হলে সবার পকেটেই কমবেশি টাকা ওঠে। এ ব্যবসার শুরুতেই কিছু লাভ হয়েছিল বর্তমানে চালান খুঁজে পাওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে বলে বলছেন ফুলকপি ব্যবসায়ী কাবিলপুর ইউনিয়নের তৈয়ব আলী।
রংপুর কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মো. সিরাজল ইসলাম জানান, আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। চাষিরা তাই কৃষক শীতকালীন সবজি চাষ করতে পেরেছে। ফলনও ভালো হয়েছে।
তিনি বলেন, ফুলকপি, রসুন আগে চাষ করতে পেরেছে যারা তারা দাম ভালো পেয়েছে। ফুল কপি, রসুন ও কাঁচা মরিচ সহ ফলন ভাল হওয়ায় শীতকালীন সবজির দামে কৃষক খুশি যেমন সাধারণ ক্রেতারাও খুশি।
