পাগলা মসজিদের দানবাক্সে ৩ মাস ২৭ দিনে মিললো প্রায় ১২ কোটি টাকা

প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২:০৮ | অনলাইন সংস্করণ

  কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদের দান বাক্সে এবার ৩ মাস ২৭ দিনে ১৩টি দান বাক্স খুলে পাওয়া গেছে ১১ কোটি ৭৮ লাখ ৪৮ হাজার ৫৩৮ টাকা। এছাড়াও রয়েছে বিপুল পরিমান স্বর্ণালঙ্কার ও বিদেশি মুদ্রা।

দানের এইসব অর্থ মসজিদের স্থানে আন্তর্জাতিক মানের ইসলামী কমপ্লেক্স বানানোসহ জেলার দরিদ্র-অসহায় রুগীদের চিকিৎসাকাজে ব্যায় হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

মসজিদের লোহার দানবাক্স খুলতেই দেখা যায় শুধু টাকা আর টাকা। এসব টাকা বস্তায় ভরে নেয়া হয় ওই মসজিদেরই দোতলায়। পরে, আইনশৃঙ্খলা বাহীনির কড়া নিরাপত্তায় মসজিদের মেঝেতে বসে টাকা গুনেন প্রায় চারশত মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষক ও শতাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা। তিন থেকে চারমাস পরপরই এমন দৃশ্যের দেখা মিলে কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদে।

এবার ৩ মাস ২৭ দিন পর শনিবার সকালে মসজিদের ১৩ টি দানবাক্স খুলে বের করা হয় ৩৫ বস্তা টাকা। এছাড়াও রয়েছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, রূপা ও স্বর্ণালংকার।

এর আগে চলতি বছরের ৩০ আগস্ট এ মসজিদের দান বাক্সে ৪ মাস ১৭ দিনে পাওয়া গিয়েছিলো ৩২ বস্তা টাকা। দিন শেষে গণনা করে যার পরিমান দাঁড়িয়েছিলো ১২ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার ২২০ টাকা। এছাড়াও পাওয়া যায় বিপুল পরিমান স্বর্ণ-রূপার অলঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রা।

এ মসজিদে সঠিক নিয়তে মানত করলে রোগ-বালাই দূর হওয়া সহ বিভিন্ন মনোবাসনা পূর্ণ হয়। এমন বিশ্বাস থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সকল ধর্মের মানুষ প্রতিনিয়ত মানতের নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার, বৈদেশিক মুদ্রা, গরু, ছাগল, হাস, মুরগীসহ বিভিন্ন সামগ্রী দান করে থাকেন। এছাড়াও দেশ ও দেশের বাহির থেকে মসজিদের ওয়েবসাইটে অনলাইনে টাকা দান করে থাকেন মানতকারিরা।

চট্রগ্রামের চকরিয়া থেকে পাগলা মসজিদে আসা জাফর আলী বলেন, এ মসজিদের নাম অনেক শুনেছি। এখানে দান করলে নাকি মনের আশা পুরন হয়। আমিও আমার মনের আশা পুরনের জন্য এসে দান করে গেলাম।

নরসিংদী থেকে আসা কমলা বেগম বলেন, আমি মানত করেছিলাম একটা খাসি দিবো মনের আশা পুরন হলে। আমার আশা পুরন হয়েছে, তাই খাসি দিয়ে গেলাম এসে। পাশাপাশি পাগলা মসজিদে নামাজও পড়ে গেলাম।

ইতিমধ্যে দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এই পাগলা মসজিদ। বর্তমানে মসজিদের ব্যাংক একাউন্টে শতকোটি টাকারও উপরে জমা হয়েছে। যা দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান মসজিদের সভাপতি কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা।

জনশ্রুতি রয়েছে, প্রায় আড়াইশ বছর আগে পাগলবেশী এক আধ্যাত্মিক পুরুষ খরস্রোতা নরসুন্দা নদীর মধ্যস্থলে মাদুর পেতে ভেসে এসে বর্তমান মসজিদ এলাকা জেলা শহরের হারুয়ায় থামেন। তাকে ঘিরে সেখানে অনেক ভক্তকুল সমবেত হন। ওই

পাগলের মৃত্যুর পর সমাধির পাশে এই মসজিদটি গড়ে ওঠে। পরে কালক্রমে এটি পরিচিতি পায় পাগলা মসজিদ নামে।