দেশ একটা ক্রান্তিকাল সময় পার করছে: ঠাকুরগাঁওয়ে মির্জা ফখরুল
প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:২২ | অনলাইন সংস্করণ
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশ একটা ক্রান্তিকাল সময় পার করছে। বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে, বিভিন্ন রকম কথা হচ্ছে। আন্দোলন হচ্ছে, দেশকে অস্থির করে তুলবার জন্য আবার একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে।
তিনি বলেন, আমাদের এ সময় একটু সাবধান থাকতে হবে। আবার যেন কোনো অন্ধকারের দিকে চলে না যায়। আমাদের সাবধান থাকতে হবে, আমাদের ভুলে নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে সেই চক্রান্তকারীদের হাতে যেন না পড়ি। আমাদের দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে মানব কল্যাণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়েয়া রোড ঠাকুরগাঁওয়ে আলেম ওলামাগণের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা আলমগীর আলেম ওলামাগণের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা নির্ধারণ করবেন আগামী নির্বাচনে এদেশ পরিচালনা কারা করবে। এই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, নির্বাচনকে ভন্ডুল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। গত ১৫ বছরে আমাদের যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে সেগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রের যে প্রতিষ্ঠানগুলো, সেগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। কতিপয় লোক অতি ধনী করবার জন্য ব্যাংকগুলোকে লুটপাট করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি নিজে ১১ বার কারাগারে গিয়েছি। আমার অপরাধ আমি গণতন্ত্র চাইছি। আমার অপরাধ আমি সত্যের প্রতিষ্ঠা চেয়েছি। আমাদের আলেম ওলামাদের নির্যাতন না করা হয় সেটা চেয়েছি। সেই সময়ে আমরা কেউ নিরাপদ ছিলাম না। আপনারা রাস্তাঘাটে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারতেন না। ভয়ে ভয়ে থাকতেন, কখন আপনাদের জঙ্গি বানিয়ে ধরে নিয়ে যায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের সংবিধানে প্রথম ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ যুক্ত করেছিলেন। দেশে কোরআন ও সুন্নাহর বাইরে কোনো আইন প্রণয়ন করতে দেওয়া হবে না। একটি মহল বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে যে আমরা নাকি কোরআন ও সুন্নাহভিত্তিক আইন চাই না। বাস্তবতা হলো বিএনপি সব সময় কোরআন ও সুন্নাহর আদর্শের মধ্যেই থাকতে চায়।
তিনি আরো বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, আর আমরা শান্তি চাই। এই নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। আমাদের সম্পর্কে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, ভুল বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান, আর সকলের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি রক্ষায় বিএনপিই সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে।
২৪-এর গণঅভ্যুত্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, ঢাকা শহর রক্তে রঞ্জিত হয়ে গিয়েছিল। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় ছয় বছর কারাগারে আটক রাখা হয়। কারাগারে তার যথাযথ চিকিৎসা ও মানবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়নি।
ইতিহাস তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে ইসলাম নিয়ে কথা বলার সুযোগ ছিল না। পরবর্তীতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সর্বপ্রথম ওলামায়ে কেরামকে সামনে এগিয়ে আনেন এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন।
আসন্ন নির্বাচনের ইশতেহার নিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচিত হলে সারা দেশের মসজিদের ইমাম, খতিব ও মুয়াজ্জিনদের সামাজিক মর্যাদা ও জীবনমান উন্নয়নে মাসিক সম্মানী প্রদান করা হবে। ধর্মীয় উৎসবে বিশেষ ভাতা দেওয়া হবে এবং দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া ১৯৯৩ সালে বিএনপি সরকারের প্রণীত মসজিদ শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম সারাদেশে পুনরায় নিশ্চিত করা হবে।
পরিশেষে তিনি ওসমান হাদি, আবু সাইদসহ স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি মির্জা ফয়সল আমীন, সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, ঠাকুরগাঁও বড় মসজিদের খতিব খলিলুর রহমান, ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাফেজ রশিদ আলম, আলেম ওলামাসহ বিএনপির নেতাকর্মীরা।
