নকলায় বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের যেন হলুদ গালিচা
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:১৮ | অনলাইন সংস্করণ
মো. মোশারফ হোসাইন, নকলা (শেরপুর)

শেরপুরের নকলা উপজেলার নদ-নদীর চরাঞ্চল ও ছোট-বড় বিলপাড়ে যেদিকে দৃষ্টি যায়, দিগন্তজুড়ে শুধু সরিষার মাঠ নজরে পড়ে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। গত বছরের চেয়ে ২৭০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ বেড়েছে। এবার সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভালো ফলনের আশায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর উপজেলায় সরিষার আবাদ হয়েছে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে। আর গত বছর এর আবাদ হয়েছিল ৫ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে।
সরিষার আবাদ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে জানা গেছে, কৃষকদের মাঝে সরকারি প্রণোদনা প্রদান, পুনর্বাসনের লক্ষ্যে বীজ-সার বিতরণ এবং অধিক লাভের আশায় কৃষকদের দিন দিন আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়া।
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাগর চন্দ্র দে জানান, উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়ন, চরঅষ্টধর, টালকী, পাঠাকাটা, বানেশ্বরদী, গৌড়দ্বার, নকলা ও উরফা ইউনিয়নসহ পৌরসভায় সরিষার আবাদ করা হয়েছে। তবে চন্দ্রকোনা, চরঅষ্টধর, পাঠাকাটা, বানেশ্বরদী ও উরফা ইউনিয়নে আবাদ বেশি হয়েছে।
তিনি আরও জানান, সরিষা চাষের উপযোগী সব জমিকে আবাদের আওতায় এনে জমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা ও কৃষিপণ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের পরামর্শ সেবা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ৩ হাজার কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, উপজেলার প্রায় সব এলাকার কৃষকরা গত কয়েক বছর ধরে সরিষা আবাদ করে বাড়তি আয়ের পথ খুঁজে পেয়েছেন। তাই দিন দিন উপজেলায় সরিষার আবাদ বাড়ছে।
বানেশ্বরদী ইউনিয়নের কায়দা গ্রামের বিধবা কৃষাণী মোছা. রাশিদা বেগম শান্তি জানান, তিনি ২০ শতাংশ জমিতে মধ্যবর্তী ফসল হিসেবে সরিষা আবাদ করেছেন। সরিষা উঠানোর পরে ওই জমিতে বোরো ধান রোপণ করবেন। সরিষা আবাদে যা খরচ হয়েছে এবং যা খরচ হবে, তার দ্বিগুণ লাভ পাবেন বলে আশা করছেন এই বিধবা কৃষাণী।
ভূরদী খন্দকার পাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ্ব ছাইদুল হকসহ অনেকে জানান, সরিষা একটি মধ্যবর্তী ফসল। তাছাড়া সরিষাতে উৎপাদন খরচ কম, কিন্তু লাভ বেশি পাওয়া যায়। তাই আগাম আমন ধান কাটার পরে তারা তাদের সব জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন।
কৃষকরা জানান, সরিষা উঠিয়ে ওই ক্ষেতে বোরো আবাদ করা হবে। এই বোরো আবাদে বাড়তি চাষ ও সার লাগে না এবং পরিশ্রম কম লাগে, কিন্তু ফলন ভালো হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আবদুল ওয়াহেদ জানান, এবছর নকলা উপজেলায় স্থানীয় জাতের পাশাপাশি বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৫, বারি সরিষা-১৭, বিনা সরিষা-৪, বিনা সরিষা-৯, বিনা সরিষা-১১ এবং স্থানীয় টরি-৭ জাতের সরিষা আবাদ করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি আবাদ করা হয়েছে যথাক্রমে বারি সরিষা-১৪, টরি-৭ এবং বিনা-৯ জাতের সরিষা।
তিনি জানান, এবছর নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে ধান খেতে বিনা চাষে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। এ আবাদ চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের চরবাছুরআলগী এলাকায় বেশি হয়েছে।
নতুন এই প্রযুক্তিতে আমন ধান কাটার ৭ থেকে ১০ দিন আগে ধান ক্ষেতে প্রতি বিঘাতে এক কেজি করে সরিষা বীজ বপন করা হয়। ধান কাটার পরে সরিষাতে সামান্য সার এবং প্রয়োজনে হালকা সেচ দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এতে একদিকে জমি চাষ ও বীজ বপনের আগে জমিতে সার বাবদ খরচ লাগে না, অন্যদিকে জমিতে সঠিক সময়েই বোরো ধান রোপণ করা যায়। আগামী বছর থেকে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে সরিষার আবাদ আরও বাড়বে বলে তিনি মনে করছেন।
তিনি আরও জানান, সরিষা চাষের উপযোগী সব জমিকে সরিষা আবাদের আওতায় এনে জমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং সরিষার উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন না হলে, এ বছর উপজেলায় সরিষার বাম্পার ফলন হবে এবং উৎপাদন বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
