মানবতাবিরোধী অপরাধ
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মাহমুদুর রহমানের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:১২ | অনলাইন সংস্করণ

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী ‘দৈনিক আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমানের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেলে এই সাক্ষ্যগ্রহণের জেরা শেষ করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন– বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এর আগে, সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রপক্ষের ৪৬তম সাক্ষী হিসেবে এই মামলায় প্রথম দিনের মতো জবানবন্দি দেন মাহমুদুর রহমান। এরপর গতকাল মঙ্গলবার এই মামলায় দ্বিতীয় দিনের জবানবন্দি দেন মাহমুদুর রহমান। তারপর তাকে জেরা শুরু করে আজ শেষ করেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে (স্টেট ডিফেন্স) নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
এ নিয়ে শেখ হাসিনার মামলায় ৪৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। ৪৭তম সাক্ষী হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের জবানবন্দির মধ্য দিয়ে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) ছাড়া সাক্ষ্যগ্রহণ হতে পারে।
মাহমুদুর রহমানের জবানবন্দির জেরায় ভারত সরকারের নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ কীভাবে পরিচালিত হতো, গত ১৭ বছরে ফ্যাসিবাদের উত্থান, বিকাশ ও পরিণতির পূর্ণ বর্ণনা উঠে এসেছে। শেখ হাসিনা কীভাবে বিরোধী পক্ষকে দমন করে অবৈধ ক্ষমতায় টিকে ছিল তুলে ধরে হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন আমার দেশ পত্রিকার এই সম্পাদক।
গত বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) এ মামলায় ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল মাহমুদুর রহমান ও নাহিদ ইসলামের। তবে ব্যক্তিগত কারণে তারা সেদিন ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে পারেননি। এ প্রেক্ষিতে সময় চেয়ে আবেদন করা হলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন।
এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় গত ৩ আগস্ট। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দি ও জেরা চলমান রয়েছে। এখন পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল মোট ৪৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন করেছে।
এর মধ্যে, গত ২ সেপ্টেম্বর ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন এ মামলার আসামি থেকে রাজসাক্ষী হওয়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তার জেরা শেষ হয় ৪ সেপ্টেম্বর। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে জুলাই-আগস্টে গণহত্যা চালানো হয়েছে জানিয়ে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। একই সঙ্গে অজানা অনেক তথ্য ট্রাইব্যুনালের সামনে এনেছেন সাবেক এই পুলিশ প্রধান।
সাক্ষীদের জবানবন্দিতে গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে দেশজুড়ে হত্যাযজ্ঞ চালানোর বীভৎস বর্ণনা উঠে এসেছে। আর এসবের জন্য দায়ী করে শেখ হাসিনা, কামালসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন শহীদ পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরা।
গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ উত্থাপন করেছে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রটি মোট ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠার, যার মধ্যে ২,০১৮ পৃষ্ঠা তথ্যসূত্র, ৪,০০৫ পৃষ্ঠা জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি এবং ২,৭২৪ পৃষ্ঠা শহীদদের তালিকার বিবরণ রয়েছে। এ মামলায় সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন মোট ৮১ জন। গত ১২ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা চূড়ান্ত প্রতিবেদন চিফ প্রসিকিউটরের দপ্তরে জমা দেয়।
