বিচার স্বচ্ছ হয়েছে, শেখ হাসিনা খালাস পেলে খুশি হতাম: রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪৬ | অনলাইন সংস্করণ

পলাতক ও ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার ভালোভাবে হয়েছে, স্বচ্ছ হয়েছে। শেখ হাসিনা খালাস পেলে তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন।
সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, তিনি তার মক্কেলের খালাসই চান, যা একজন আইনজীবীর স্বাভাবিক প্রত্যাশা। শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগের কোনো চেষ্টা করেছেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে তিনি কোনো ধরনের যোগাযোগের চেষ্টা করেননি এবং আইনগতভাবেও তার কোনো বিধান নেই।
শেখ হাসিনার পক্ষ থেকেও কোনো যোগাযোগ বা সহায়তা করা হয়নি। যদি প্রচ্ছন্নভাবে কোনো সহায়তা করা হতো, তাহলে একজন আইনজীবী হিসেবে তা তার জন্য আরও সুবিধাজনক হতো, তবে তা হয়নি।
তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে একটি মামলার পক্ষে লড়াই করার পর স্বাভাবিকভাবেই তার আশা থাকে যে তার মক্কেল খালাস পাবেন। তিনি মনে করেন বিচার প্রক্রিয়া ভালোভাবে ও স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে।
রাজসাক্ষী আব্দুল্লাহ আল মামুন সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তিনি বলেন যে মামলায় যার পক্ষে তিনি লড়ছেন না, তার বিষয়ে মন্তব্য করা তার জন্য সমীচীন নয়। তিনি শুধুমাত্র তার আসামিদের পক্ষে কথা বলতেই বাধ্য।
শেখ হাসিনার মামলায় প্রসিকিউশনের বক্তব্য ও গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারের কিছু বিষয়ে মিল রয়েছে— এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রসিকিউশন তাদের বক্তব্য বলবে, তিনি তার বক্তব্য রাখবেন। বিচারিক সিদ্ধান্ত নেবে ট্রাইব্যুনাল।
এদিকে রায়কে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় কয়েক স্তরের কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন, বিজিবি এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। তৎপর রয়েছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। নিরাপত্তার স্বার্থে রোববার সন্ধ্যার পর থেকে দোয়েল চত্বরে শিক্ষাভবনমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে এবং জনসাধারণের চলাচল সীমিত করা হয়েছে।
গত ১৩ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল দিনটি নির্ধারণ করেন। অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারপতি মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
শেখ হাসিনার মামলায় মোট ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়। ৯ কার্যদিবস ধরে প্রসিকিউশন ও স্টেট ডিফেন্সের যুক্তিতর্ক ও পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করা হয়। ২৩ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের সমাপনী বক্তব্যসহ চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এবং রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেনের যুক্তিখণ্ডন শেষে রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়।
যুক্তিতর্কে শেখ হাসিনা ও কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে প্রসিকিউশন। তবে আসামি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন রাজসাক্ষী হওয়ায় তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত ট্রাইব্যুনালের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। যদিও তার খালাস দাবি করেছেন তার আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ। রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেনের দৃঢ় বিশ্বাস, শেখ হাসিনা এবং কামাল খালাস পাবেন।
মামলাটিতে তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়— উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা এবং আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো। মামলার অভিযোগপত্র আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার, যেখানে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও অন্যান্য দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা। মামলায় মোট ৮৪ জনকে সাক্ষী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। গত ১২ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা চিফ প্রসিকিউটরের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।
