দেড় মাসে ক্রয় ১১৩ কোটি ডলার

ডলার বাজারে ভারসাম্য আনতে সক্রিয় বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:৩৮ | অনলাইন সংস্করণ

ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে গত দেড় মাসে প্রায় ১১৩ কোটি ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রফতানি আয় এবং রেমিট্যান্সের প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন মুখপাত্র জানান, বাজারমূল্যে কোনো সরাসরি হস্তক্ষেপ করা হয়নি। বরং অতিরিক্ত ডলার সরবরাহ কমিয়ে এনে বাজারে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা চলছে। এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ব্যাংকাররা। তাদের মতে, ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দাম কমে গেলে রেমিট্যান্স অন্য পথে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, যা বৈধ চ্যানেলে প্রবাসী আয়ের প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

অস্থিরতা কাটিয়ে ডলার বাজার এক বছরেরও বেশি সময় ধরে স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ১২১ থেকে ১২২ টাকার মধ্যে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর চাপের মুখে গত মাসে ডলারের দাম বাজারভিত্তিকভাবে নির্ধারণ করা হয়। 

শুরুতে কিছুটা আশঙ্কা থাকলেও দামে বড় ধরনের কোনো অস্থিরতা দেখা যায়নি। বরং বাজারে ডলারের যোগান বাড়ায় দাম কিছুটা কমতে শুরু করে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে তা নেমে আসে ১২০ টাকারও নিচে।

মূলত রফতানি আয় ও রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ফলে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায়। এর সঙ্গে যোগ হয় বৈদেশিক ঋণের অর্থ প্রবাহ, যা রিজার্ভ বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। সরবরাহ বৃদ্ধির এ প্রভাব পড়ে বিনিময় মূল্যে।

ডলারের দাম স্বাভাবিক রাখতে বাজার থেকে ডলার কিনতে শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১৩ জুলাই ১৭ কোটি ডলার এবং ৪ সেপ্টেম্বর ১৩.২ কোটি ডলার কেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত বাজার থেকে প্রায় ১১৩ কোটি ডলার কেনা হয়েছে।

রফতানি এবং রেমিট্যান্স মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে দেশে আসে সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলারের ওপের। এ সময়ে আমদানি এবং ঋণ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ১০ বিলিয়ন কিছু বেশি। ফলে বড় একটি অংশ উদ্বৃত্ত থেকে যায়। বাড়তি ডলার টেন্ডারের মাধ্যমে কিনে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

রফতানি ও রেমিট্যান্স মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে দেশে এসেছে সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এ সময়ে আমদানি ও ঋণ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ১০ বিলিয়নেরও কিছু বেশি। ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা উদ্বৃত্ত রয়েছে। এ উদ্বৃত্ত মুদ্রা বাজারে ছাড়ার পরিবর্তে, বাংলাদেশ ব্যাংক বাড়তি ডলার টেন্ডারের মাধ্যমে বাজার থেকে কিনে নিচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান গণমাধ্যমকে বলেন, এটা কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না। সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকে ডলারের পরিমাণ বেড়ে গেলে তারাও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত ডলার বিক্রি করতে চায়। যেন ডলারের দাম স্থিতিশীল থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ব্যাংকাররা। তাদের মতে, এর ফলে ব্যাংকগুলো ডলার বিক্রির সুযোগ পাচ্ছে, যা বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে গতিশীলতা তৈরি করছে। তাদের মতে, যদি এই সুযোগ না থাকত, তবে রেমিট্যান্স সংগ্রহে ব্যাংকগুলোর অনাগ্রহ দেখা দিতে পারত, যা বৈধ পথে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কমিয়ে দিত।