শেখ পরিবারসহ বড় শিল্পগোষ্ঠীর পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরানোর উদ্যোগ
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২০:২১ | অনলাইন সংস্করণ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারসহ বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে বড় পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটি প্রশাসনিক ও আইনি সহায়তার জন্য ১২টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে নিযুক্ত করতে বলেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে অর্থ ফেরানোর কাজ করা হবে।
সোমবার (৬ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা অংশ নেন।
ইসলামী বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ওমর ফারুক খান জানান, ১২টি আন্তর্জাতিক ল’-ফার্ম ও অ্যাসেট রিকভারি প্রতিষ্ঠানকে নিযুক্ত করলে তারা পাচারকৃত অর্থ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে। কিছু ব্যাংক লিড ব্যাংক হিসেবে কাজ করবে এবং একাধিক ব্যাংক কনসোর্টিয়াম গঠন করে এসব সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করবে। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, টাকা কীভাবে ডিপোজিট করা সম্ভব।
ওমর ফারুক আরও জানান, স্পেশাল সিআইডি (SPAR CID) প্রাথমিকভাবে মোট ১১টি স্থানীয় শিল্পগোষ্ঠীর নাম শনাক্ত করেছে। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের নামগুলো হলো বসুন্ধরা, নাসা, এস আলম ইত্যাদি।
তিনি বলেন, “এনডিএ (গোপনীয়তার চুক্তি) করে আমরা স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ শুরু করবো। কিছু মিনি এনবিএ ইতোমধ্যে এসেছে এবং ইউসুবিল শতকরা এক-দুটি অ্যাডভান্স এসেছে। মূল উদ্দেশ্য হলো—বাংলাদেশ থেকে যেসব টাকা গিয়েছে, সেগুলো পুনরুদ্ধার করা।”
এবি ব্যাংকের এমডি মিজানুর রহমান বলেন, এই প্রকল্পে কোনো নির্দিষ্ট ব্যাংকের পরামর্শ নেওয়া হয়নি; এটি একটি ‘টোটাল ব্যাঙ্কিং’ কনসেপ্ট, যেখানে বহু ব্যাংককে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। সভায় প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে।
পূবালী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ আলী জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক মানি-লন্ডারিং সংক্রান্ত প্রেক্ষাপটে ওই ১২টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এনডিএ করে ফরেন অ্যাসেট রিকভারি কাজ করানো হবে।
প্রসঙ্গত, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের নাম ছাড়াও পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তালিকায় রয়েছেন—সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর আরামিট গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, সিকদার গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, ওরিয়ন, জেমকন, নাবিল, সামিট প্রভৃতি। এই গোষ্ঠীর মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থের কিছু অংশ সুবিধাভোগী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের কাছে পৌঁছেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
আগে কাজ করা আন্তর্জাতিক চারটি সংস্থা হলো—দ্য স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি (STAR), ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টি-কোরাপশন কোঅর্ডিনেশন সেন্টার (IACCC), যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস (DOJ) এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাসেট রিকভারি (ICAR)।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সংস্থাগুলো তথ্য আহরণে সফল হয়েছে এবং এখন আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশ দিয়েছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো অবিলম্বে ওই ১২টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করুক।
