শামুকের ‘অজানা জগৎ’ উন্মোচনে রাবির গবেষণায় সাফল্য

প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১৪:১২ | অনলাইন সংস্করণ

‘প্রকৃতির মুক্তা’ খ্যাত বিলুপ্তপ্রায় গেছো শামুক অ্যামফিড্রোমাস গ্লোবোনেভিল্লি-এর প্রজনন বিষয়ে বিশ্বে প্রথমবারের মতো অভিনব আচরণ শনাক্ত করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গবেষকরা। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রজাতিটি সম্পূর্ণরূপে গাছে বসবাস ও প্রজনন করে থাকে। এটি বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারে বিস্তৃত অ্যামফিড্রোমাস প্রজাতির ক্ষেত্রে ডিম পাড়ার প্রথম প্রামাণ্য নথি।

গবেষণার ফলাফল সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান জার্নাল Folia Malacologica-তে প্রকাশিত হয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার জীববৈচিত্র্য গবেষণায় নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের বিভিন্ন স্থানে পাঁচ দিনব্যাপী পরিচালিত মাঠ পর্যায়ের জরিপে এই পর্যবেক্ষণ পাওয়া যায়।

গবেষণাটি পরিচালনা করেন রাবির মলাস্কান রিসার্চ ল্যাবরেটরির প্রধান, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহরিয়ার শোভন এবং নেদারল্যান্ডসের ভ্রিজে ইউনিভার্সিটির ড. তাকুমি সাইতো। দলে আরও ছিলেন মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা টি এস রূপময় তঞ্চঙ্গ্যা এবং একই বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মো. রহিম বাদশা ও মো. জায়িদ হাসান।

গবেষণায় দেখা গেছে, শামুকটি গাছের গহ্বরে ১০ থেকে ৫০টি করে গোলাপি-সাদা ডিম পাড়ে। কিছু ডিম খোলসের গায়ে লেগে থাকে, আবার কিছু গহ্বরের বাইরেও দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, প্রজাতিটির পুরো জীবনচক্র গাছেই সম্পন্ন হয়—যা পূর্বে কখনও নথিভুক্ত হয়নি।

শুধু আম গাছ নয়, কাঁঠালসহ অন্যান্য গাছেও এরা ডিম পাড়ে বলে ধারণা করছেন গবেষকরা। পূর্ববর্তী গবেষণায় পাতার নিচে ডিম পাড়ার তথ্য থাকলেও, এবার গাছের গহ্বরে ডিম পাড়ার নতুন আচরণ শনাক্ত হয়েছে।

সহগবেষক রহিম বাদশা (সোহান) বলেন, বাংলাদেশে ফিল্ড-ভিত্তিক গবেষণা এখনও সীমিত। বেশিরভাগ গবেষণা কেবল ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর নির্ভর। এই ধারা ভেঙে শাহরিয়ার স্যার ও জাপানি গবেষকের সমন্বয়ে আমরা বিরল প্রজাতির উপর সফল গবেষণা করেছি। ইতোমধ্যে পাঁচটি নতুন প্রজাতি আবিষ্কৃত হয়েছে। আরও কিছু গবেষণা প্রকাশের অপেক্ষায় আছে। তবে অর্থায়নের অভাবে গবেষণার গতি ব্যাহত হতে পারে। তাই সরকারি ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পর্যাপ্ত ফান্ডিং জরুরি।

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহরিয়ার শোভন বলেন, বিশ্বে এ ধরনের গেছো শামুকের প্রজাতি অত্যন্ত বিরল। এত ক্ষুদ্র গহ্বরে একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক ডিম রাখা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। আমাদের এই গবেষণালব্ধ তথ্য দক্ষিণ এশিয়ার স্থলচর গ্যাস্ট্রোপডের আচরণগত বিবর্তন ও সংরক্ষণ নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

প্রসঙ্গত, প্রফেসর শোভনের নেতৃত্বাধীন মলাস্কান রিসার্চ ল্যাবরেটরি ইতোমধ্যে বাংলাদেশে গেছো শামুকের পাঁচটি নতুন প্রজাতি শনাক্ত করেছে এবং বিশ্বের প্রথম সফল কৃত্রিম প্রজনন গবেষণাও সম্পন্ন করেছে—যা এই বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর সংরক্ষণে যুগান্তকারী অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।