রাকসু নির্বাচন

দফায় দফায় সংঘর্ষ শেষে ফের শুরু মনোনয়ন বিতরণ কার্যক্রম

প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৫, ১৬:৩৫ | অনলাইন সংস্করণ

  রাবি প্রতিনিধি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণের শেষদিন অস্থিরতায় পণ্ড হয়ে যায় সব কার্যক্রম।

রোববার (৩১ আগস্ট) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের (ছাত্রদল) নেতা-কর্মীরা রাকসু নির্বাচন কমিশনের অফিসে তালা ঝুলিয়ে ভাঙচুর চালান। এ সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাসে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ৯টার দিকে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহীর নেতৃত্বে কর্মীরা রাকসু কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে প্রবেশ করে চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেন এবং অফিসে তালা দেন। তাদের দাবি ছিল—প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পরে তারা সেখানেই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।

এ সময় সাবেক সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার মনোনয়নপত্র নিতে আসলে ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের বাধার মুখে পড়েন। পরে তিনিও তালাবদ্ধ গেটের সামনে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা এসে ছাত্রদলের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন।

শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সর্দার জহুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা রাকসুর ফি দিয়েছে, অথচ তারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই বৈষম্য নিরসনের দাবি জানাচ্ছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।”

ইউট্যাব রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ফোকলোর বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের ভোটার তালিকায় রাখা হয়নি। এ দাবি যৌক্তিক।”

রাকসু কার্যালয় ভবনে ছাত্রদল তালা দেওয়ায়  নির্বাচনকে ঘিরে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সকাল থেকে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এসময় বহিরাগত ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে প্রবেশ করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তাদের উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরে ক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাস ত্যাগে বাধ্য করে।

সংঘর্ষের সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে সাবেক সমন্বয়ক মাহায়ির ইসলামসহ কয়েকজন আহত হন। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ঘটনার পর সাধারণ শিক্ষার্থীরা সংবাদমাধ্যমকে জানান, ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ ও সহিংস আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। তারা ছাত্রদলের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান।

তালা ভেঙে ফের মনোনয়ন বিতরণ শুরু

দীর্ঘ টানাপড়েন শেষে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তালা ভেঙে রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে প্রবেশ করে। এরপর নির্বাচন কমিশন পুনরায় মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু করে।

রাকসুর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সেতাউর রহমান বলেন, “মনোনয়ন বিতরণের কাজ আবার শুরু হয়েছে। আজই (রোববার) যারা আগ্রহী তারা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, “আমরা দুই পক্ষকেই সহনশীলভাবে কর্মসূচি পালনের অনুরোধ জানিয়েছি। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা চলছে। তবে কোনোভাবেই যাতে নির্বাচন কার্যক্রম ব্যাহত না হয়, সে বিষয়ে আমরা সচেষ্ট।”

উল্লেখ্য, আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। রোববার  মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষদিন।