সিএনজির ধাক্কায় শিক্ষার্থী গুরুতর আহত, পৌনে ২ লাখ টাকা জরিমানা

প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:০৩ | অনলাইন সংস্করণ

  নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) নাট্যকলা ও পরিবেশনাবিদ্যা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাশ্বত গোলদার অন্তু সিএনজির ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর অভিযুক্ত সিএনজি চালক ও মালিক পক্ষকে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট সংলগ্ন ট্রামপুল এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

রিকশায় করে ত্রিশাল বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন শাশ্বত গোলদার অন্তু ও তার সহপাঠী মুহিত। হঠাৎ পেছন দিক থেকে দ্রুতগতির একটি সিএনজি রিকশাটিকে ধাক্কা দিলে রিকশা উল্টে যায় এবং তারা রাস্তায় ছিটকে পড়েন। পালিয়ে যাওয়ার সময় সিএনজি চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শাশ্বতের হাতের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পাশাপাশি রিকশাচালক ও মুহিতও আঘাতপ্রাপ্ত হন।

স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে শাশ্বতের শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।

দুর্ঘটনার খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শিউলিমালা হলের সামনে নয়টি সিএনজি আটক করে এবং দায়ী চালকের শাস্তি ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। তারা ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেন, যার মধ্যে ছিল দোষী চালকের লাইসেন্স বাতিল, আহতদের চিকিৎসা ব্যয় বহন, ক্ষতিপূরণ প্রদান, ক্যাম্পাসে বহিরাগত যানবাহন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ও স্থায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

পরে ত্রিশাল থানা পুলিশ, সিএনজি মালিক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

গতকাল শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফারেন্স কক্ষে ত্রিশাল উপজেলা প্রশাসন, সিএনজি মালিক সমিতি, থানা পুলিশ, প্রক্টরিয়াল বডি ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসা ব্যয় বাবদ মোট ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা নির্ধারণ করা হয়।

এর মধ্যে অভিযুক্ত সিএনজি চালক ২৫ হাজার টাকা নগদে পরিশোধ করেন। পরিবহন শ্রমিক ও মালিক সমিতি ৫০ হাজার টাকা, পৌরসভার জনকল্যাণ তহবিল থেকে ২৫ হাজার টাকা এবং অবশিষ্ট ৭৫ হাজার টাকা আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে চালক পরিশোধ করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়।

এছাড়া, অভিযুক্ত সিএনজি প্রশাসনের হেফাজতে রাখার শর্তে শিক্ষার্থীরা আটক করা অন্যান্য সিএনজি ছেড়ে দিতে সম্মত হন।

আহত শিক্ষার্থী শাশ্বত গোলদার অন্তু বলেন, “ময়মনসিংহ মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসার পর আমাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করা হয়। তবে আগেও আমার হাত ভেঙেছিল, তখন খুলনায় চিকিৎসা নিয়েছিলাম। তাই পারিবারিক সিদ্ধান্তে প্রথমে খুলনায় যাচ্ছি।”

নাট্যকলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. কামাল উদ্দীন বলেন, “গোলদার আমাদের বিভাগের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। আমরা তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। সে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে বলে আশা করছি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, “ঘটনার পরপরই আমরা উপজেলা প্রশাসন, সিএনজি মালিক সমিতি, থানা পুলিশ ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসি। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সড়কবাতি সংস্কার, যানবাহনের গতিসীমা নির্ধারণ, সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন এবং ১ নম্বর গেট থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে।”

বর্তমানে আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসা চলছে। ক্যাম্পাসে যান চলাচল স্বাভাবিক হলেও শিক্ষার্থীরা স্থায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থার বাস্তবায়ন দাবি করে আসছেন।