নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯ম পে-স্কেলের দাবিতে কর্মচারীদের মানববন্ধন
প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:৫৯ | অনলাইন সংস্করণ
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

নবম পে-স্কেল বাস্তবায়ন ও বেতন কাঠামো পুনর্গঠনের দাবিতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা মানববন্ধন করেছেন।
রোববার (১৬ নভেম্বর) সকাল ১১টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ফেডারেশনের (বাআবিকফ) কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন দপ্তরের প্রায় শতাধিক কর্মচারী অংশ নেন।
মানববন্ধনের শুরুতে কর্মচারীরা ব্যানার–প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে বর্তমান বেতন কাঠামোর প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তাদের অভিযোগ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মৌলিক চাহিদা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়ায় বাসাভাড়া, খাদ্য, চিকিৎসা ও সন্তানের শিক্ষার ব্যয় সামলাতে গিয়ে বেশিরভাগ কর্মচারী মাসের মাঝামাঝি পৌঁছতেই অর্থকষ্টে ভোগেন। কেউ কেউ ঋণ ছাড়া সংসার চালাতেই পারছেন না বলে জানান।
কর্মচারী সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম কাজল মানববন্ধনে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, “বর্তমান বেতন কাঠামোয় ন্যূনতম জীবনমান বজায় রাখা অসম্ভব। মাসের শুরুতেই সব বেতন শেষ হয়ে যায়; কখনো কখনো একবেলা খেয়ে আরেক বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। নবম পে-স্কেল বাস্তবায়ন না হলে কর্মচারীদের দুর্দশা আরও বাড়বে।”
তিনি জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
বক্তারা আরও অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক প্রশাসনিক কার্যক্রম সচল রাখার মূল দায়িত্ব পালন করলেও কর্মচারীরা বছরের পর বছর আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা বিভিন্ন ভাতা ও সুবিধা পেলেও কর্মচারীদের দাবি সবসময় উপেক্ষিত থাকে বলে অভিযোগ তাদের।
মানববন্ধনে বাআবিকফের প্রস্তাবিত ২১ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে— সর্বনিম্ন বেতন ৩৫ হাজার টাকা নির্ধারণ, বিদ্যমান গ্রেড সংখ্যা কমিয়ে ১২টিতে নামিয়ে আনা, গ্রেডভিত্তিক বেতন অনুপাত ১:৪ করা, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ১০ শতাংশ করা, টাইম-স্কেল ও সিলেকশন-গ্রেড পুনর্বহাল এবং চিকিৎসা, যাতায়াত ও বাড়িভাড়া ভাতা বাস্তবসম্মত হারে বৃদ্ধি।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া আরেক কর্মচারী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক সেবা কাঠামোর অন্যতম প্রধান অংশ আমরা। অথচ সবচেয়ে কম সুবিধা পাই। মূল্যস্ফীতিতে জীবনযাত্রার ব্যয় যখন বাড়ছে, তখন নতুন পে-স্কেলই আমাদের একমাত্র আশার জায়গা।”
কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী কর্মচারীরা হাতে লেখা প্ল্যাকার্ডে লিখেন—“নবম পে-স্কেল চাই”, “জীবনমান নিশ্চিত করুন”, “ন্যূনতম অধিকার চাই”, “বঞ্চনার জবাব চাই”, “বেতন–ভাতা বাড়াতে হবে।”
মানববন্ধন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে প্রশাসনিক ভবনের একটি সূত্র জানিয়েছে, কর্মচারীরা দাবিগুলো লিখিতভাবে দিলে তা সিন্ডিকেট ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর বিষয়ে প্রশাসন বিবেচনা করতে পারে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই একই দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি চলছে। মানববন্ধন, সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে কর্মচারীরা পে-স্কেল সংস্কারের দাবি জানাচ্ছেন। ফলে বিষয়টি এখন জাতীয় পর্যায়েও আলোচনায় এসেছে।
মানববন্ধন শেষে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা জানান, পরবর্তী ধাপে তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আনুষ্ঠানিক স্মারকলিপি দেবেন। দাবি আদায় না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণারও ইঙ্গিত দেন তারা।
