জাবিতে রাতভর উচ্চশব্দে গান: প্রক্টরকে হুমকি, জাকসু নেতাকে গালি

প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:০৯ | অনলাইন সংস্করণ

  জাবি প্রতিনিধি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক বাউল গানের আসরে মধ্যরাত পর্যন্ত উচ্চশব্দে গান বাজানোর অভিযোগ উঠেছে। শব্দ কমানো ও দ্রুত অনুষ্ঠান বন্ধের অনুরোধ জানাতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, হুমকি এবং জাকসুর এক নেতাকে অশালীন ভাষায় গালি দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

রবিবার (৩০ নভেম্বর) বিকেল ৫টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে “বাউলের দ্রোহ” শিরোনামে এই গানের আসর বসানো হয়।

জানা যায়, বাউল সাধক আবুল সরকার বয়াতিকে গ্রেপ্তার ও দেশব্যাপী বাউল সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এ আয়োজন করা হয়। দেশব্যাপী বিভিন্ন স্থান থেকে আগত শিল্পীরা এতে অংশ নেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকাল থেকেই পরিবহন চত্বরে উচ্চশব্দে গান শুরু হয়। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শব্দ আরও বাড়তে থাকে। আশপাশে একাধিক আবাসিক হল থাকায় এবং অনেকের চূড়ান্ত পরীক্ষা থাকায় শিক্ষার্থীরা অতিষ্ঠ হয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ জানান।

অভিযোগের পর উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসানের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম রাশিদুল আলম, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য, জাকসু নেতৃবৃন্দ ও কয়েকজন শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

রাত দেড়টার দিকে প্রক্টর শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে শব্দ কমানো ও দ্রুত অনুষ্ঠান শেষ করার অনুরোধ করলে আয়োজকরা তাঁর সঙ্গে ঔদ্ধত্য আচরণ ও উচ্চবাচ্য করেন। একইসঙ্গে জাকসুর কার্যকরী সদস্য মোহাম্মদ আলী চিশতিকে অশালীন ভাষায় গালি দেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রক্টর বলেন—শিক্ষার্থীদের অধিকার খর্ব করে রাতভর গান বাজানোর কোনো এখতিয়ার নেই। এসময় আয়োজক কমিটির সদস্য সজিব আহমেদ জেনিচ প্রক্টরকে হুমকি দেন এবং অনুষ্ঠান সারারাত চালানোর ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, “সারারাত অনুষ্ঠান চলবে, কে বন্ধ করবে দেখা যাবে।”

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, দেশের এই ক্রান্তিকালে একটি গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ জানান, কেউ বা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ করেন।

আইন ও বিচার বিভাগের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তুহিন আহমেদ বলেন, “আমরা অবাক হয়েছি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সঙ্গে এমন আচরণ দেখে। অনেকেই প্রক্টরের দিকে তেড়ে আসছিল। শুধু হাত তোলা বাকি ছিল।”

তিনি আরও বলেন, “প্রক্টরকে হুমকি দিয়ে তারা বলছে উচ্চশব্দে সারারাত গান চলবে, পারলে বন্ধ করে দেখুক।”

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্ট গ্রুপেও শিক্ষার্থীরা রাতভর উচ্চশব্দে গান বাজানো ও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করেন। অনেকেই সহনীয় শব্দমাত্রা ও দ্রুত অনুষ্ঠান শেষ করার দাবি জানান।

জাকসুর ভিপি, জিএস, সাংস্কৃতিক সম্পাদকসহ অনেক শিক্ষার্থীই একই দাবি জানান।

এদিকে ইসলাম অবমাননাকারী বাউল আবুল সরকারের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে জাকসুর কার্যকরী সদস্য মোহাম্মদ আলী চিশতি বলেন, “এটি ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও উস্কানিমূলক। আমরা অনুরোধ করতেই তারা আরও শব্দ বাড়িয়ে দেয়। একপর্যায়ে আমাকে অশালীন গালিগালাজ করে।”

তিনি জানান, এর তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে এবং ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীবিরোধী কর্মকাণ্ড করলে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে বলে আয়োজকদের সতর্ক করা হয়েছে।

অন্যদিকে আয়োজক কমিটির সদস্য সজিব আহমেদ জেনিচ অভিযোগ করেন, প্রক্টর অতিথিদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন।

তিনি বলেন, “জাহাঙ্গীরনগরের ইতিহাসে গতকাল ছিল এক কলঙ্কিত দিন। এর আগে কোনো প্রক্টর গান বন্ধ করতে আসেননি। তাই আমরা শুধু প্রতিবাদ জানিয়েছি।”

তিনি বলেন, “আমরা শব্দ সহনীয় পর্যায়ে রেখেছিলাম। তারপরও আমাদের দোষারোপ করা হয়েছে। আগেও রাত ২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান হয়েছে; তখন সমস্যা হয়নি। শুধু আমাদের ক্ষেত্রেই কেন—তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”

এই পরিস্থিতিতে প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সুবিধা–অসুবিধা আমাদেরই দেখতে হয়। আমরা শুধু অনুরোধ করেছিলাম দ্রুত অনুষ্ঠান শেষ করতে, কিন্তু তারা সে অনুরোধ রাখেনি। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত।”

তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান রক্ষার দায়িত্ব সবার। একজন শিক্ষার্থী যে অশালীন মন্তব্য করেছে—এটা অগ্রহণযোগ্য। আমরা এমন ঘটনা আর দেখতে চাই না।”

তিনি জানান, শব্দের মাত্রা সহনীয় রাখতে ও নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে শব্দ না যেতে দ্রুত নির্দেশনা জারি করা হবে। সময়সীমা রাত ১০টা থেকে বাড়িয়ে ১১টা করার পরিকল্পনাও রয়েছে।