মেডিকেল ভর্তি: প্রশ্নপত্র তুলনামূলক সহজ, বেড়েছে আসনের চাপ

প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:৩৩ | অনলাইন সংস্করণ

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বড় অংশের অভিমত অনুযায়ী, প্রশ্নপত্র তুলনামূলকভাবে সহজ ছিল এবং আগের বছরের তুলনায় কম চাপের। তবে সবাই একই অনুভূতি প্রকাশ করেনি।

কেউ কেউ এক–দুই প্রশ্ন কনফিউজিং মনে করেছেন। সামগ্রিকভাবে পরীক্ষার্থীদের অভিমত– পরীক্ষা স্বস্তিদায়ক, প্রতিযোগিতা কঠিন, প্রত্যাশা-মিশ্রিত দুশ্চিন্তাজনক।

পরীক্ষা সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত দেশের ১৭টি কেন্দ্র এবং ৪৯টি ভেন্যুতে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা অনুষদ ভবনে পরীক্ষা দেওয়া মীম ইসলাম বলেন, ‘হলে ঢোকার পর প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম। অনেকেই বলছিল প্রশ্ন কঠিন হবে। তবে হাতে প্রশ্নপত্র পেয়ে বুঝলাম, প্রশ্নগুলো বেশ স্ট্রেইট। পড়া বিষয় থেকে এসেছে। তাই পরীক্ষা দেওয়ার সময় মনটা হালকা হয়ে গেছে।’

মীমের মতোই তানভীর আহমেদ বলেন, প্রশ্ন স্ট্যান্ডার্ড ঠিক থাকলেও কঠিন ছিল না। প্রথমে কিছু নার্ভাস ছিলেন, কিন্তু পরে বাকিগুলো দেখে আত্মবিশ্বাস বাড়ে।

তিনি বলেন, ‘প্রশ্নের ধরন ক্লিয়ার ছিল, অপ্রয়োজনীয় লম্বা বর্ণনা বা জটিল ফরম্যাট ছিল না। শেষের দিকে বেশ কনফিডেন্ট হয়ে যাই।’ তানভীরের মতে, প্রশ্ন সহজ হলেও ফলাফল নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকে যায়।

উত্তরার পরীক্ষার্থী রাফি হাসান বলেন, ‘আমি পুরোপুরি মেডিকেল প্রস্তুতি নেইনি, শুধু হালকা রিভিশন করেছি। তারপরও পরীক্ষা ভালো গেছে। মোট ৬৭টি প্রশ্ন করতে পেরেছি, যা আমার নিজের কাছেও অবাক লাগছে।’

কেউ কেউ প্রশ্নের কনফিউজিং অংশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ভিকারুননিসা কেন্দ্রের অর্ণব শওকত বলেন, ‘বায়োলজির বেশিরভাগ প্রশ্ন সহজ ছিল। তবে জেনারেল নলেজ ও মানবিক গুণাবলির কয়েকটি প্রশ্ন অপ্রত্যাশিত ছিল, যা আমাকে কিছুটা থামিয়ে দিয়েছে।’

তিনি মনে করেন, মানসিক চাপ সম্পর্কিত প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির সময়কার দোটানার প্রতিফলন।

শারীরিক ও মানসিক চাপের কথাও জানিয়েছেন অনেকে। ঢাকার ফারিহা হক বলেন, ‘পরীক্ষার আগে অসুস্থ ছিলাম। ডাক্তাররা বলেছিলেন স্ট্রেস-ইনডিউসড সমস্যার কারণে। বাবা-মা খুব ভয় পেয়েছিলেন। তারপরও পড়ায় ফিরে পরীক্ষা দিয়েছি। এখন স্বস্তি লাগছে।’

নম্বর বণ্টন আগের বছরের মতো—১০০ নম্বরের এমসিকিউ: জীববিজ্ঞান ৩০, রসায়ন ২৫, পদার্থবিজ্ঞান ১৫, ইংরেজি ১৫ এবং সাধারণ জ্ঞান–প্রবণতা–মানবিক গুণাবলি ১৫। ভুল উত্তরে ০.২৫ নম্বর কাটা হয়েছে। পাস মার্ক ৪০। প্রশ্ন সহজ হওয়ায় অনেকেই দ্রুত উত্তর দিতে পেরেছেন, কেউ কেউ সময়ের শেষ পর্যন্ত দুই-তিনটি প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা করেছেন।

সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ১৩,০৫১টি হলেও, গত বছরের তুলনায় এবার আসন কমেছে প্রায় ৫৭২টি। সরকারি ১৪ কলেজে আসন কমেছে ৩৫৫, তিনটিতে বেড়েছে ৭৫—নেট সরকারি আসন কমেছে ২৮০। বেসরকারিতেও কমেছে ২৯২ আসন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রশ্ন সহজ হলেও আসন কমায় প্রতিযোগিতার চাপ বেড়েছে, ফলে ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত উদ্বেগ থাকবে।

পরীক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ কেন্দ্র ঘুরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে সংক্ষেপে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ভিকারুননিসা নূন কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রেও যাওয়ার কথা রয়েছে।

স্বাস্থ্য সচিব ঢাকা কলেজ কেন্দ্র ঘুরে পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করেছেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তর জানিয়েছে, কোথাও বড় ধরনের অনিয়মের খবর পাওয়া যায়নি।