যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাবাসীর দুর্ভোগ 'নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে' উল্লেখ করে, চলমান ইসরায়েলি হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ বিশ্বের ২৫টি দেশ। এক যৌথ বিবৃতিতে দেশগুলো বলেছে, এই যুদ্ধ এখনই বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার দেওয়া ওই বিবৃতিটি মূলত এমন এক সময়ে দেওয়া হলো যখন গাজায় যুদ্ধ চলছে প্রায় ২১ মাস ধরে। এতে ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনির ওপর ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে।
দেশগুলোর ওই বিবৃতিতে বলা হয়, “গাজায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। যুদ্ধ এখনই বন্ধ হওয়া দরকার”। এছাড়া যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা, হামাসের হাতে বন্দি থাকা ব্যক্তিদের মুক্তি এবং জরুরি সহায়তা প্রবাহে বাধা না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
যুদ্ধের সময় মানবিক সহায়তা ধীর গতিতে সরবরাহ, শিশু ও সাধারণ মানুষকে হত্যা এবং খাদ্য-পানির মতো ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে নিহত হওয়ার ঘটনাকে বিবৃতিতে ‘অমানবিক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
জাতিসংঘ ও গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে– মে মাসের শেষ দিক থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৮৭৫ জন ফিলিস্তিনি খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল মে মাসের শেষের দিকে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা পূর্ণ অবরোধ কিছুটা শিথিল করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “ইসরায়েল যে কায়দায় সহায়তা সরবরাহ করছে, তা বিপজ্জনক। এটা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে এবং গাজাবাসীর মানব মর্যাদাকে ধ্বংস করছে। বেসামরিক জনগণের কাছে জরুরি মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে না দেওয়াটা গ্রহণযোগ্য নয়। ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের আওতায় তার দায়িত্ব পালন করতে হবে।”
আল জাজিরার লন্ডন প্রতিনিধি সোনিয়া গালেগো বলেন, “এটি ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের পক্ষ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। শুধু ইউরোপ নয়, এর বাইরেও একটি বড় আন্তর্জাতিক ঐক্য দেখা যাচ্ছে।”
তিনি জানান, আগে শুধু ইউরোপের দেশগুলোই সমালোচনায় সরব ছিল, এখন অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, এমনকি জাপানের মতো দেশগুলোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে।
যৌথ বিবৃতিতে বিশ্বনেতারা গাজায় তাত্ক্ষণিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধান গড়তে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত তারা।
এদিকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চললেও, এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি, এবং কোনো সমঝোতা হলে তা দীর্ঘস্থায়ী শান্তি বয়ে আনবে কিনা, তাও অনিশ্চিত।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার বলেছেন, গাজায় সামরিক অভিযান বিস্তৃত করা হবে, যাতে হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আলোচনায় সুবিধা নেওয়া যায়।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দেওয়া এক বক্তব্যে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার প্রশংসা করে বলেন, “এই সংকটের কোনো সামরিক সমাধান নেই। পরবর্তী যুদ্ধবিরতিই হতে হবে চূড়ান্ত যুদ্ধবিরতি।”
উল্লেখ্য, ইসরায়েল গাজায় হামলা শুরু করে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। ওই দিন হামাসের একটি হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলে কমপক্ষে ১ হাজার ১২৯ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এখনো ৫০ জন জিম্মি গাজায় অবস্থান করছেন, তবে ধারণা করা হয় তাদের অর্ধেকই জীবিত নেই।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু।