মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার জান্তার, ডিসেম্বরে নির্বাচন
প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৪:৩৮ | অনলাইন সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মিয়ানমারের সামরিক সরকার বৃহস্পতিবার দেশটিতে চলমান দীর্ঘমেয়াদি জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির সামরিক জান্তা ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যদিও এই নির্বাচন আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনার মুখে পড়েছে এবং বিরোধী দলগুলো ইতোমধ্যেই এটি বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে।
সামরিক সরকারের মুখপাত্র জাও মিন তুন সাংবাদিকদের পাঠানো এক ভয়েস মেসেজে বলেন, “বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আজ জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ছয় মাসের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখলের পর সামরিক সরকার দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছিল। সেই থেকে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, যাতে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারান।
জরুরি অবস্থার ফলে সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং নির্বাহী, আইনসভা এবং বিচার বিভাগের সর্বময় ক্ষমতা নিজের হাতে কেন্দ্রীভূত করেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি নির্বাচনকে সংঘাতের “বিকল্প পথ” হিসেবে তুলে ধরছেন।
রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়েছে, নির্বাচন আয়োজনের জন্য ১১ সদস্যের একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে থাকছেন মিন অং হ্লাইং নিজেই। তিনি বর্তমানে “অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি” হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং নির্বাচন তত্ত্বাবধান করবেন বলে জানিয়েছে সরকারি টেলিভিশন এমআরটিভি।
নতুন নির্বাচনী আইন, কঠোর শাস্তির বিধান
বুধবার সামরিক সরকার একটি নতুন নির্বাচনী আইন প্রণয়ন করেছে, যেখানে নির্বাচন ব্যাহত করার চেষ্টা করলে তিন থেকে দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
আইনে বলা হয়েছে, কেউ যদি বক্তব্য, আন্দোলন, উসকানি বা প্রচারপত্র বিতরণের মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে, তবে তাকে তিন থেকে দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া প্রার্থীদের, নির্বাচন কর্মকর্তাদের বা ভোটারদের হুমকি, বাধা বা শারীরিকভাবে আঘাত করলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা ও সমালোচনা
তবে এখনো নির্দিষ্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে প্রশিক্ষণও চলছে।
জাতিসংঘের এক বিশেষজ্ঞ গত মাসে মন্তব্য করেন, এই নির্বাচন একটি “প্রতারণা”, যার মাধ্যমে সামরিক সরকার তার নিয়ন্ত্রণ বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই নির্বাচন শেষে মিন অং হ্লাইং হয় রাষ্ট্রপতি হিসেবে, নয়তো সেনাপ্রধান হিসেবে থেকে কার্যত দেশটির শাসন চালিয়ে যাবেন।
গত বছর অনুষ্ঠিত একটি জনশুমারিতে বলা হয়, ৫১ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষের তথ্য সংগ্রহ করা যায়নি। নিরাপত্তাজনিত সীমাবদ্ধতাকে এর জন্য দায়ী করা হয়।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, নির্বাচন সামনে রেখে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সহিংসতা ও প্রতিরোধমূলক অভিযান চালাতে পারে। তবে এই মাসে সামরিক সরকার অস্ত্র ফেলে ‘আইনের আওতায় ফিরে আসতে’ ইচ্ছুকদের জন্য আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
তথ্যসূত্র: ফ্রান্স ২৪-এর প্রতিবেদন; এএফপি, এপি ও রয়টার্স অবলম্বনে
