কলকাতায় ‘পার্টি অফিস’ খুলেছে আওয়ামী লীগ

প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩:২০ | অনলাইন সংস্করণ

গতবছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী পালিয়ে প্রতিবেশি দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। নিরাপদে অবস্থানের পাশাপাশি তারা সেখানে ‘পার্টি অফিস’ বা দলীয় কার্যালয় খুলে চালাচ্ছে রাজনৈতিক কার্যক্রমও।

এমনই এক তথ্য উঠে এসেছে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কলকাতার কাছাকাছি একটি উপনগরীর ব্যস্ততম এলাকায় বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সে খোলা হয়েছে সেই পার্টি অফিস। সেখানে নিয়মিতিই ভিড় করেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলির শীর্ষ এবং মধ্যম স্তরের নেতারা।

এর আগে, শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরের কয়েক মাসে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যারা ভারতে অবস্থান করছেন, তারা নিজেদের মধ্যে ছোটখাটো বৈঠক বা দলীয় দফতরের কাজকর্ম চালাতেন নিজেদের বাসাবাড়িতেই। আর বড় বৈঠকগুলো হত কোনো রেস্টুরেন্ট কিংবা ব্যাঙ্কয়েট হল ভাড়া করে।

বিবিসি জানায়, একটি বাণিজ্যিক ভবনের আট তলায় লিফট দিয়ে উঠে বাঁদিকে গেলেই সারি সারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। স্টে করিডোরের দুদিকে হাল্কা বাদামী রঙের একের পর এক দরজা। তারমধ্যেই একটিতে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস। বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই যে এটি কোনো দলীয় কার্যালয়। শুধু বাইরে নয় ভেতরে দেখলেও কেই তা বুঝতে পারার কথা নয়। পাঁচশো বা ছয়শো স্কোয়ার ফুটের ঘরটিতে নেই কোনো সাইন বোর্ড, শেখ হাসিনা অথবা শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের এক নেতা বিবিসিকে বলেন, কোনো ছবি, সাইনবোর্ড কোনো কিছুই আমরা রাখিনি খুবই সচেতন ভাবে। আমরা চাইনি এই ঘরটার পরিচিতি প্রকাশ করতে। এমনকি একটা দলীয় কার্যালয়ে যেসব ফাইল ইত্যাদি থাকে, সেসবও এখানে রাখা হয় না। নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ, বৈঠক ইত্যাদির জন্য একটা ঘর দরকার ছিল, এটা পাওয়া গেছে। এটাকে আমরা পার্টি অফিসই বলি, কিন্তু আদতে এটা একটা বাণিজ্যিক অফিস। আগে যে সংস্থা কাজ করত এখানে, তাদেরই ছেড়ে যাওয়া চেয়ার, টেবিল এসবই আমরা ব্যবহার করি।

তিনি আরও বলেন, ৩০-৩৫ জনের বৈঠক এই কার্যালয়ে করা যায়, কিন্তু একটু চাপাচাপি করে বসতে হয়। ছোটখাটো বৈঠক বিভিন্ন নেতাদের বাসাবাড়িতে এখনও হয়। তবে বড় বৈঠকগুলো, যেখানে শ দুয়েক নেতাকর্মী হাজির হওয়ার কথা, সেরকম বৈঠকের জন্য কোনো ব্যাঙ্কয়েট হল বা কোনো রেস্টুরেন্টের একটি অংশ ভাড়া নেওয়া হয়।

জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আসা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলির অনেক শীর্ষ নেতা এবং সাবেক মন্ত্রী কলকাতা বা তার আশপাশের অঞ্চলে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন। সূত্রের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে অন্তত ৭০ জন সংসদ সদস্য এবং প্রায় ২০০ জন বিভিন্ন জেলার সভাপতি-সম্পাদক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়র-সহ শীর্ষ নেতৃত্ব কলকাতা ও আশপাশের অঞ্চলে থাকছেন। কলকাতা ও আশপাশের এলাকায় থাকা নেতারাই পার্টি অফিসে যাতায়াত করেন।

শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ সপরিবারে ভারতে থাকেন, আবার কোথাও একসঙ্গে কয়েকজন মিলেও একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছেন। কারও কারও পরিবার মাঝে মাঝে বাংলাদেশ থেকে এসেও কিছুদিন কাটিয়ে যান।

বিবিসি বলছে, আওয়ামী লীগের এই নতুন পার্টি অফিসের ব্যাপারে ওই বাণিজ্যিক পরিসরে যাতায়াত করা সাধারণ মানুষ কিছুই জানেন না। দলেরও কোন স্তরের নেতা-কর্মীরা এই অফিসেরে ব্যাপারে কতটা জানেন, সেটা জানা যায়নি। তবে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে ভারতীয় গোয়েন্দারা এই অফিসের ব্যাপারে জানেন। এছাড়া ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ স্তরের অনুমোদন ছাড়া এই দলীয় অফিস থেকে আওয়ামী লীগের কাজকর্ম চলতে পারত না।