গাজায় ইসরায়েলি বরবর্তায় নিহত আরও ১০৫ ফিলিস্তিনি
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৪৭ | অনলাইন সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফিলিস্তিনের গাজা সিটিতে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নগরীর নিয়ন্ত্রণ নিতে চাওয়া দখলদারদের টানা হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ১০৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বহু নারী ও শিশু ছাড়াও রয়েছেন ত্রানপ্রার্থীরা। খবর: আল জাজিরার।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) গাজা জুড়ে ইসরায়েলি হামলায় ১০৫ জন নিহত হন। এর মধ্যে ৩২ জন নিহত হন খাদ্য ও সহায়তা নেওয়ার সময়। বিশেষ করে আল-সাবরা এলাকায় ব্যাপক হামলা চালানো হয়, যেখানে কয়েকদিন ধরে আক্রমণ চলছে।
প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রস্তুতির মধ্যে ইসরায়েল এখন যুদ্ধের একটি "নির্ণায়ক পর্যায়ে" রয়েছে। যদিও এই অভিযান আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে।
আল জাজিরার হিন্দ খোদারি মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকা থেকে বলেন, “গাজা সিটিতে এখন ফিলিস্তিনিরা একটি খাঁচার মধ্যে আটকে আছে। তারা যতটা সম্ভব বিমান হামলা থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে। তারা যেখানেই যাচ্ছে, হামলা তাদের পেছন পেছন ধেয়ে আসছে।”
তিনি আরও বলেন, “খাদ্য ও সহায়তা অবরোধের কারণে তারা এখন ক্ষুধায়ও মারা যাচ্ছে।”
গত ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ১৩ জন ফিলিস্তিনি ক্ষুধায় মারা গেছেন, ফলে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ক্ষুধাজনিত মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬১ জনে।
এর মধ্যে ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ২২ আগস্ট থেকে, যেদিন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা গাজায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি চলছে বলে নিশ্চিত করে।
মঙ্গলবার নিহতদের মধ্যে ২১ জন একটি পানি সংগ্রহের লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় নিহত হন। এদের মধ্যে ৭ জন শিশু ছিল।
এই হামলাটি ঘটে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের কাছের আল-মাওয়াসি এলাকায়, যেটিকে ইসরায়েল আগে "নিরাপদ এলাকা" হিসেবে ঘোষণা করেছিল।
ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, “তারা পানি নিতে লাইনে দাঁড়িয়েছিল, তখনই ইসরায়েলি বাহিনী সরাসরি তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়। জীবন রক্ষার চেষ্টা করতে গিয়ে তারা নতুন এক হত্যাযজ্ঞের শিকার হলো।”
এ হামলার দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে দেখা যায় রক্তাক্ত পানির জার ও শিশুদের নিথর দেহ।
অন্যদিকে, গাজা সিটির আল-আফ পরিবারর বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে এই হামলাকে “যুদ্ধাপরাধ” ও “জাতিসংঘ সনদ লঙ্ঘন” বলে আখ্যা দিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রকেও এ সহিংসতার জন্য দায়ী করেছে।
এদিকে আরও দুই সাংবাদিক — আল-মানারার রাসমি সালেম ও ইমান আল-জামলি — ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। এর ফলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ২৭০ জনের বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
গাজা যুদ্ধকে ইতিমধ্যে ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত হিসেবে উল্লেখ করছে সাংবাদিক অধিকার সংগঠনগুলো।
