
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলে তালেবান ও পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে তীব্র গোলাগুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রতিক কাবুলে বিমান হামলার জেরে এই সংঘর্ষ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে আফগান তালেবান প্রশাসন। এ ঘটনায় ইরান, কাতার ও সৌদি আরব উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে।
শনিবার রাতে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইনায়াতুল্লাহ খোয়ারিজমি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ বলেন, আফগান ভূখণ্ডে পাকিস্তানের “পুনঃপুন লঙ্ঘন” ও “বিমান হামলার” জবাবে তালেবান বাহিনী “সফল প্রতিশোধমূলক অভিযান” চালিয়েছে। তাঁর দাবি, এ অভিযান মধ্যরাতে শেষ হয়েছে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি তালিবান বাহিনীর হামলাকে “অযৌক্তিক” আখ্যা দিয়ে বলেন, “একটি ইটের জবাবে একটি পাথর—পাকিস্তান সেনা সদস্যরা তাৎক্ষণিক ও কার্যকর জবাব দিয়েছে।” এক্স-এ দেওয়া পোস্টে তিনি আরও বলেন, “আফগান বাহিনীর পক্ষ থেকে বেসামরিক জনগণের ওপর গুলি চালানো আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। কোনো ধরনের উসকানি সহ্য করা হবে না।”
পাকিস্তানের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম রেডিও পাকিস্তান জানিয়েছে, সীমান্তের অন্তত ছয়টি স্থানে তালেবান বাহিনী হামলা চালিয়েছে। এর পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী “তীব্র ও শক্ত প্রতিক্রিয়া” জানায়। তারা রাতের আঁধারে গোলাগুলি ও ভারী অস্ত্র ব্যবহারের ভিডিও প্রকাশ করেছে।
তবে সংঘর্ষ শেষ হয়েছে কি না, সে বিষয়ে পাকিস্তান বা তালিবানের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করে কিছু জানানো হয়নি।
বিমান হামলার পেছনে কে?
গত বৃহস্পতিবার আফগান রাজধানী কাবুলে একাধিক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তালেবান দাবি করেছে, এ হামলা পাকিস্তান চালিয়েছে। যদিও ইসলামাবাদ এখনো এ হামলার দায় স্বীকার করেনি।
পাকিস্তান সরকার পাল্টা অভিযোগ করে বলছে, আফগানিস্তান পাকিস্তানি তালেবান (টিটিপি) সদস্যদের আশ্রয় দিচ্ছে—যারা পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে এবং এতে ভারতের সহায়তা পাচ্ছে।
তবে নয়াদিল্লি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তালিবান প্রশাসনও বলেছে, তারা অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে তাদের ভূখণ্ড ব্যবহারের অনুমতি দেয় না।
আঞ্চলিক উদ্বেগ
এই সংঘর্ষ ও উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে প্রতিবেশী ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, “উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শন করতে হবে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের স্থিতিশীলতা গোটা অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”
কাতার জানিয়েছে, তারা “গভীর উদ্বেগের” সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “উভয় পক্ষের উচিত সংলাপ ও কূটনীতিকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং উত্তেজনা প্রশমন করা।”
সৌদি আরব-ও এক বিবৃতিতে বলেছে, “সংঘর্ষ এড়াতে সংযম, সংলাপ ও বিচক্ষণতা প্রয়োজন। অঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে এ ধরনের উত্তেজনা নিরসন জরুরি।”
সৌদি সরকার দুই দেশ—পাকিস্তান ও আফগানিস্তান—এর জনগণের শান্তি, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেছে।
প্রসঙ্গত, আফগান সীমান্তে পাকিস্তানের সঙ্গে তালিবান সরকারের উত্তেজনা নতুন নয়। তবে কাবুলে বিমান হামলার পর এ সংঘর্ষ নতুন মাত্রা নিয়েছে বলে পর্যবেক্ষকদের মত।
সূত্র: আল জাজিরা