ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য উত্তেজনায় চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ধীরগতি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য উত্তেজনায় চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ধীরগতি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন করে বাণিজ্য উত্তেজনা শুরু হওয়া ও অভ্যন্তরীণ আবাসন খাতের সংকট দীর্ঘায়িত হওয়ায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে গত তিন মাসে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এই বছর ৪ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা গত এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ধীরগতির।

গতকাল সোমবার প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যানে এই তথ্য জানানো হয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জুলাই পর্যন্ত তিন মাসে দেশটির প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ২ শতাংশ। চীনের প্রবৃদ্ধি কমার এই তথ্য এমন এক সময় সামনে এলো, যখন চীন বিরল খনিজের (রেয়ার আর্থ মিনারেল) রপ্তানিতে ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নাজুক বাণিজ্যবিরতি চুক্তিকে নড়বড়ে করে দিয়েছে। এই খনিজগুলো বৈশ্বিক ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

এদিকে, চীনের শীর্ষ নেতৃত্ব আগামী পাঁচ বছরের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নির্ধারণে বৈঠকে বসছে। দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (এনবিএস) জানিয়েছে, অর্থনীতি চাপের মধ্যেও ‘দৃঢ় স্থিতিশীলতা ও প্রাণশক্তি’ দেখিয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রযুক্তি খাত ও ব্যবসায়িক সেবার সম্প্রসারণ এই প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি। বেইজিং চলতি অর্থবছরে ‘প্রায় ৫ শতাংশ’ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সরকারি সহায়তা ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পূর্ববর্তী বাণিজ্যবিরতি চুক্তি দেশের অর্থনীতিকে বড় ধাক্কা থেকে এখন পর্যন্ত রক্ষা করেছে।

চীন চলতি মাসের শুরুতে বিরল খনিজ রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপের ঘোষণা দেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখান। তিনি চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন।

এদিকে, মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, তিনি মালয়েশিয়ায় চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন, যাতে বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমিত করার পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে বৈঠক আয়োজন করা যায়।

বাণিজ্য উত্তেজনা বাড়ার আগ পর্যন্ত ওয়াশিংটনের সঙ্গে চুক্তির সুযোগে চীনা ব্যবসায়ীরা যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক পণ্য পাঠিয়েছে, যার ফলে সেপ্টেম্বরে চীনের রপ্তানি বেড়েছে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। একই সময়ে আমদানিও বেড়েছে। চীনের শিল্পোৎপাদনও এক বছর আগের তুলনায় সেপ্টেম্বরে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে থ্রিডি প্রিন্টিং, রোবটিকস ও বৈদ্যুতিক যানবাহন খাত ভালো করেছে। পাশাপাশি আইটি সাপোর্ট, কনসালটেন্সি, পরিবহন ও লজিস্টিকসসহ সেবা খাতেও প্রবৃদ্ধি এসেছে।

অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ শিয়ানা ইউ বলেন, রপ্তানি চীনের দুর্বল ভোক্তা ব্যয়ের প্রভাব কিছুটা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করেছে। তবে সরকারি ব্যয় ও প্রণোদনা ছাড়া প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৮ শতাংশের বেশি হবে বলে মনে হয় না। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই চীনের সম্পত্তি খাতের সংকট আরও গভীর হয়েছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বছরে রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ কমেছে ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ। বাড়ির দাম পড়ে গেছে, বিক্রি কমছে, এমনকি অনেক প্রকল্প মাঝপথে ফেলে দিচ্ছেন ডেভেলপাররা।

চীনের মোট অর্থনীতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশই আসে রিয়েল এস্টেট খাত থেকে, যা স্থানীয় সরকারগুলোর বড় রাজস্ব উৎস। সরকারি সহায়তা সত্ত্বেও প্রায় সব বড় শহরে বাড়ির দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ লরা উ।

তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদে আবাসন খাতই চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সবচেয়ে বড় টানাপোড়েনের কারণ হিসেবে থাকবে, বিশেষ করে যখন দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ও বাণিজ্য বাধার নতুন অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র,বাণিজ্য,উত্তেজনা,চীন,অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি,ধীরগতি
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত