পশ্চিম তীর দখলে ইসরায়েলের পার্লামেন্টে বিল পাস
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪৬ | অনলাইন সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ইসরায়েলের পার্লামেন্টে একটি বিল পাস হয়েছে, যা ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেয়। এই বিলটি পূর্ণাঙ্গভাবে পাস হলে, পশ্চিম তীর ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে সেখানে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। যদিও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার দল এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
আল জাজিরা বলছে, ইসরায়েলি পার্লামেন্ট 'নেসেট' দখলকৃত পশ্চিম তীরের উপর ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার একটি বিলের প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে। এই পদক্ষেপটি স্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড আত্মসাতের সমতুল্য।
মঙ্গলবার ১২০ আসনের নেসেটে ২৫-২৪ ভোটে বিলটি প্রাথমিকভাবে পাস হয়। এটি আইনে পরিণত হতে আরও তিনটি ধাপের ভোটে অনুমোদন পেতে হবে। যদিও প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং তার দল লিকুদ পার্টি বিলটির বিরোধিতা করেছে, তবুও কয়েকজন জোটসঙ্গী এবং বিরোধী এমপি এতে সমর্থন প্রদান করেন।
নেসেটের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “ইসরায়েল রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব জুদিয়া ও সামারিয়া অঞ্চলে (পশ্চিম তীর) প্রয়োগ” করার উদ্দেশ্যে বিলটি আনা হয়েছে। এখন এটি আরও আলোচনার জন্য সংসদের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটিতে পাঠানো হবে।
এই ভোট এমন এক সময় হলো যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক মাস আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন যে ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর সংযুক্তির অনুমতি দেওয়া হবে না। একই সময়ে গাজায় যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখতে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও এই সময়টাতেই ইসরায়েল সফর করছেন।
এদিকে, নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি এক বিবৃতিতে এই ভোটকে “বিরোধী দলের উসকানি” বলে অভিহিত করে বলেছে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক নষ্ট করতে পারে। দলটি বিবৃতিতে আরও জানায়, “আসল সার্বভৌমত্ব আইন দেখানোর ভান করে নয়, বরং বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমেই অর্জন করা যায়।”
মূলত পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত করা হলে তা ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে কার্যত শেষ করে দেবে।
অন্যদিকে, এই বিলের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, হামাস, কাতার, সৌদি আরব ও জর্ডান।
ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা নেসেটের ফিলিস্তিনি ভূমি সংযুক্তির প্রচেষ্টা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং গাজা, এই অঞ্চলগুলো একক ভৌগোলিক ইউনিট, যার ওপর ইসরায়েলের কোনো সার্বভৌম অধিকার নেই।”
হামাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই বিলগুলো দখলদার ইসরায়েলের উপনিবেশবাদী চেহারা স্পষ্ট করে দিয়েছে। পশ্চিম তীর দখলের এই প্রচেষ্টা অবৈধ ও অগ্রহণযোগ্য”।
কাতার একে “ফিলিস্তিনিদের ঐতিহাসিক অধিকারের প্রকাশ্য লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি চ্যালেঞ্জ” হিসেবে বর্ণনা করেছে।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর সব ধরনের বসতি স্থাপন ও সম্প্রসারণমূলক কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে রিয়াদ”।
জর্ডান বলেছে, “এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের প্রকাশ্য লঙ্ঘন, দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথে বাধা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ।”
বর্তমানে দখলকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ৭ লাখের বেশি ইসরায়েলি অবৈধ বসতিতে বসবাস করছে, যা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
