আল্লাহর দিকে ফিরে আসুন

প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৫৭ | অনলাইন সংস্করণ

  ইসলাম ডেস্ক

আল্লাহতায়ালা কোনো সম্প্রদায়ের ওপর হঠাৎ করে আজাব নাজিল করেন না। বিভিন্নভাবে প্রথমত বান্দাকে সতর্ক করেন। এরপরও যদি বান্দা গাফলতের ঘুম থেকে জাগ্রত না হয়, তখন আসমান থেকে ভয়াবহরূপে নেমে আসে আল্লাহর আজাব। তখন আর কিছু করার থাকে না। জেগে উঠলেও কোনো লাভ হয় না। দুনিয়াতে যত মসিবত আছে তার সবকিছুই আমাদের বদ আমলের ফল, আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে আসমানি সতর্কবার্তা। আল্লাহ বলেন, ‘যে বিপদ তোমাদের স্পর্শ করে তা তোমাদের কৃতকর্মের ফল এবং আল্লাহ (তোমাদের) অনেক অপরাধ ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা শুআরা : ৩০)।

আল্লাহতায়ালার আযাব বিভিন্নভাবে এসে থাকে। কখনও অভাব-অনটনরূপে, কখনও ঝগড়া-বিবাদরূপে, কখনও বিপদণ্ডআপদ, দুঃখ-কষ্ট, রোগশোক, মামলা-মুকাদ্দামারূপে। আবার কখনও জালেম শাসক, দুর্ভিক্ষ, মহামারি ইত্যাদিরূপে। বান্দার গোনাহ যেমন অসংখ্য তেমনি আল্লাহতায়ালার শাস্তির রূপও বিভিন্ন। আজাবে ইলাহির সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ হলো যখন তা নেয়ামতের আকৃতিতে আসে। কারণ এক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষই ভুল করে। আল্লাহর শাস্তিতে গ্রেপ্তার হওয়ার উপলব্ধিই তার থাকে না। আল্লাহতায়ালার অবাধ্য হওয়ার পরও কেউ যদি সম্মান, সম্পদ, সুস্থতা এবং পার্থিব মানমর্যাদা ভোগ করে তাহলে বুঝতে হবে সে মূলত নেয়ামতরূপে আগত আল্লাহর শাস্তিতে গ্রেপ্তার হয়ে আছে। এক্ষেত্রে যেহেতু আল্লাহতায়ালার অসন্তুষ্টির উপলব্ধি হৃদয়ে জাগ্রত থাকে না তাই তওবা না করে, অনুতপ্ত না হয়ে বান্দা অবাধ্যতা ও পাপাচারে আরও ডুবে থাকে। আল্লাহতায়ালার নিয়ম হলো, ব্যক্তিগত কর্মের প্রতিদান ও শাস্তি ব্যক্তিগতভাবেই দিয়ে থাকেন। কিন্তু যখন গোটা সমাজ কিংবা সমাজের অধিকাংশ লোক নৈতিক অধঃপতন ও চারিত্রিক অবক্ষয়ের শিকার হয়, তখন গোটা সমাজের ওপর নেমে আসে খোদায়ী গজব। দু-চারজন লোক যদি তখন ভালো থাকে; কিন্তু পতনোম্মুখ সমাজের লাগাম টেনে ধরে ধ্বংসের গহ্বর থেকে তাদের উদ্ধার করে কল্যাণ ও আলোর পথ দেখানোর কোনো চেষ্টা না করে তাহলে তারাও সে গজব থেকে নিস্তার পায় না। বিষয়গুলো সামনে রেখে আসুন আমরা আমাদের সমাজকে একটু পর্যবেক্ষণ করি। নিঃসন্দেহে আমরা দেশের ও দেশের উন্নয়নের জন্য অনেক শিল্প-কারখানা বানিয়েছি। আকাশচুম্বি বিলাসবহুল দালান গড়ে তুলেছি। সড়ক, জনপথ ও আভ্যন্তরীণ যোগাযোগ-ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছি। আর এইসকল ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে আল্লাহর বিধান পরিপন্থী পথই আমরা অবলম্বন করেছি, যদিও তা আল্লাহর বিধানের অনুসরণ করেও সম্ভব ছিল।

আমরা সুদি ঋণ নিয়ে কাল্পনিক উন্নতির স্রাতে গা ভাসিয়েছি। ব্যাংক খুলেছি, ইন্সুরেন্সের জাল বিছিয়েছি, থিয়েটার বানিয়েছি, টিভি স্টেশন ও সিনেমা হলে নগ্নতার পসড়া বসিয়েছি। মোটকথা আল্লাহবিমুখ পথভ্রষ্ট জাতির যা কিছু বৈশিষ্ট্য তার সবই আমরা নিজেদের মাঝে ধারণ করেছি। আমরা কখনো নবীজির জীবন ও চরিত্র, নবীজির আখলাক ও আচরণ এবং মাদানি সমাজ-সভ্যতা, মাদানি রাজ্যনীতির দিকে চোখ তুলেও তাকইনি। ধর্মবিদ্বেষী, পথভ্রষ্ট ও অভিশপ্ত পশ্চিমা জাতিবর্গের চিন্তানৈতিক দাসত্বই যেন আমাদের গর্বের বিষয়। আমরা জুয়া, মদ, গানবাদ্যের ক্ষেত্রে অন্যদের ছাড়িয়ে যাওয়ার উন্মাদ প্রতিযোগিতায় নেমেছি। নারীদের উলঙ্গ করেছি। চারিত্রিক অধঃপতনের মেলা বসিয়েছি। গায়ক দলের গলায় মালা দিয়ে তাদের স্বাগত জানিয়েছি। নগ্নতা ও অশ্লীলতার প্রসারে লক্ষ-কোটি টাকা খরচ করেছি। প্রতিটি ঘর থেকে এখন নাচণ্ডগানের সুর ভেসে আসে। বাজার-ঘাটে উলঙ্গ-অর্ধউলঙ্গ নারীদের অঙ্গপ্রদর্শনের মেলা বসে। কুফর ও নাস্তিকতার ধারকরা বুক ফুলিয়ে চলে। আমরা সবকিছুই করেছি। সত্যের গলা টিপে ধরে মিথ্যার জয়গান গেয়েছি। ঘুষের বাজারকে গরম করেছি। ন্যায়কে অন্যায় আর অন্যায়কে ন্যায় বানানোর জন্য সব ধরনের কূটচাল চেলেছি। জালেমদের কুর্ণিশ করে গরিব, মজদুর ও মজলুমের সম্পদ ছিনিয়ে তাদের পায়ের নিচে পিষে ফেলেছি। মসজিদ বিরান করে সিনেমা হল আবাদ করেছি। আল্লাহর ওয়াস্তে বলুন, আল্লাহর শাস্তিকে ত্বরান্বিতকারী কোনো পাপকর্মটি আমরা করিনি? এরপরও কি আমরা পাপাচারে লিপ্ত এ অন্ধকার জীবনে খোদায়ি রহমতের শুভ্র শিশির নেমে আসার দিবাস্বপ্ন দেখি?

আল্লাহতায়ালার নিয়মণ্ডনীতি অলঙ্ঘনীয়। যে বিষ খাবে সে মারা যাবে। যে আগুনে ঝাঁপ দেবে সে জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যাবে। আর যে জাতি খোদার অবাধ্য হয়ে বিদ্রোহের পথে চলবে তার উপর খোদায়ী গজব নেমে আসবে।

আজ কৃতকর্মের ফল আমরা ভোগ করছি। শান্তি যেন আজ সোনার হরিণ। কৃষক, শ্রমজীবী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, দোকানদার কারও মনে শান্তি নেই। সুখের স্পর্শ নেই। হৃদয়ের সবুজ বাগানে যেন চৈত্রের খরা। সবকিছু থেকে বরকত উঠে গেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। সাধ ও সাধ্যের মাঝে কোনো সামঞ্জস্য নেই। দুর্ঘটনার যেন প্লাবন নেমেছে। হাসপাতালে ও আদালতে গিয়ে একটু দেখুন, মনে হবে পুরো শহরবাসী এখানে এসে ভিড় জমিয়েছে। চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, অপহরণ এবং আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতির কারণে জানমাল, ইজ্জত-আব্রু কোনো কিছুরই আজ নিরাপত্তা নেই। কিন্তু আফসোস! আমরা এখনও প্রবৃত্তির পূজায় আকণ্ঠ ডুবে আছি। কোনো ঘটনার প্রবল ঝাঁকুনিও মুসলমানদের গাফলতের ঘুম ভাঙাতে পারছে না। উপদেশ গ্রহণ করার জন্য কোনোভাবেই চোখ মেলে তাকাচ্ছে না। এ অবস্থা খুবই হৃদয়বিদারক, হতাশাব্যঞ্জক। আল্লাহতায়ালা গোটা জাতির ওপর রহম করুন।

সমাজের ছোট-বড় সবার কাছে হাত জোড় করে মিনতি করছি, আল্লাহর ওয়াস্তে আল্লাহর আজাবকে আর টেনে আনবেন না। শরয়ি পর্দা করা ফরজ। বেপর্দা, অর্ধনগ্ন হয়ে রাস্তা-ঘাটে বের হওয়া ইসলামি শরীয়ত ও ইনসানি গায়রত উভয় দিক থেকেই কবিরা গোনাহ। এই ধারা বন্ধ করুন। নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা সকল অশ্লীলতার মূল। আর গান-বাদ্য এ অশ্লীলতার ইন্ধন! আল্লাহর ওয়াস্তে এ থেকে বিরত হোন। রেডিও-টেলিভিশন ইত্যাদির লানত গোটা সমাজের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজে বের করুন। আজাবে এলাহির প্রবল স্রোতে আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে। তা থেকে বাঁচার একটিই মাত্র উপায়। তা হচ্ছে নিজের জীবনে পরিবর্তন আনুন। আল্লাহর দরবারে সমর্পিত হোন। আহকামে এলাহীর পাবন্দি করুন। অশ্লীলতার আড্ডা বন্ধ করে আল্লাহর ঘরকে আবাদ করুন।