ধর্ষণ মামলা তুলে নিতে চান মুরাদনগরের সেই নারী
প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২৫, ১৯:০০ | অনলাইন সংস্করণ

কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলা তুলে নিতে চাচ্ছেন বাদী। তিনি পরিবারের সঙ্গে পরামর্শ না করেই মামলা করেছিলেন বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন। তবে মামলা তুলে নিতে বাদীপক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি বলে জানা গেছে। মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান জানিয়েছেন, অভিযোগ নিয়ে গভীরভাবে তদন্ত করছেন তারা।
ধর্ষণ ও ধর্ষণের ভিডিও করার অভিযোগ তুলে শুক্রবার রাতে মুরাদনগর থানায় মামলা করেন এক নারী। ওই নারীর দাবি, বৃহস্পতিবার রাতে তার বাবা-মা বাড়িতে ছিলেন না। এ সময় ফজর আলী নামের একজন ঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে তাকে ধর্ষণ করেন।
গতকাল শনিবার এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রায় ১ মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, বিবস্ত্র ওই নারীকে ৮-১০ জন যুবক মারধর করছেন। এ সময় ওই নারী বাঁচার আকুতি জানান।
নারীর মামলার পর এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে মূল আসামি ফজর আলীও আছেন।
তবে আজ রবিবার গণমাধ্যমে মামলার বাদী জানান, তিনি মামলাটি তুলে নিতে চান। দ্রুতই থানায় মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আবেদন করবেন বলে জানান তিনি।
ওই নারী বলেন, 'আমি ১০ জনের শান্তি চাই, যেন সবাই শান্তিতে থাকুক। আমার যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে, এখন মামলা করে কী লাভ। আমি মামলা তুলে নেব।
আমার স্বামী বলেছেন, মামলা তুলে নিতে। যেন এসবে আমি না যাই। পরিবারের কারো সঙ্গে পরামর্শ না করেই মামলা করে ফেলছিলাম। এখন সবাই চায় মামলা তুলে নিতে।'
মামলা তুলতে কেউ চাপ দিচ্ছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমাকে কেউ চাপ দেয়নি, কেউ টাকার লোভও দেখায়নি।'
প্রধান অভিযুক্ত ফজর আলী সম্পর্কে তিনি বলেন, 'ফজর আলীর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক ছিল না। তার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলাম, ওই টাকা লেনদেন নিয়ে আমাদের মাঝে কথা হতো।'
তবে মামলা তুলে নিতে এখন পর্যন্ত থানায় বাদী কোনো আবেদন করেননি। বিষয়টি কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান।
তিনি বলেন, 'গ্রেপ্তারকৃত পাঁচজনের মধ্যে সুমন রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। সুমনের নেতৃত্বে ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করা হয়। আমরা গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছি। ঘটনার নেপথ্যের কারণগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।'
সরেজমিনে গিয়ে যা দেখা গেল
রবিবার সকালে রামচন্দ্রপুর বাহেরচর পাঁচকিত্তা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ভুক্তভোগী ওই নারীর বাড়িতে শত শত লোকজন ভিড় করেছে। নির্জন বাড়ি হওয়ায় মুরাদনগর থানা পুলিশের একটি দল ওই নারীর নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে। সকাল ১১টার দিকে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার, পিবিআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যকে ঘটনার তদন্ত করতে দেখা গেছে।
বাদীর বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে আসামি ফজর আলীর বাড়ি। তার বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পরই ঘরে তালা দিয়ে বাড়ির সবাই পালিয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
তবে ফজর আলীর বাবার সঙ্গে কথা বলেছে কালের কণ্ঠ। তিনি বলেন, 'আমার ছেলে এক সময় আওয়ামী লীগ করত। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। পাওনা টাকা দেওয়ার কথা বলে ওই মহিলার বাড়িতে নিয়ে তাকে মারধর করা হয়েছে। শুনেছি তার দুই পা ভেঙে ফেলেছে।'
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান বলেন, 'এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ফজর আলী ছাড়া অপর চারজনের বিরুদ্ধে ভিকটিম বাদী হয়ে নারী নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।'