সার আমদানিতে দুর্নীতির অভিযোগ ভিত্তিহীন: কৃষি মন্ত্রণালয়

প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:১৪ | অনলাইন সংস্করণ

সম্প্রতি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত ‘সরকারি অর্থ লোপাটের অভিনব উদ্যোগ’ বা ‘সার আমদানিতে নজিরবিহীন দুর্নীতির অভিযোগ’ শিরোনামের প্রতিবেদন সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় জানায়, এসব প্রতিবেদন ভিত্তিহীন, মনগড়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অসত্য তথ্য সম্বলিত।

এটি একটি ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার, যা মন্ত্রণালয় কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কৃষি মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রীয় চুক্তি (জি-টু-জি) এবং বেসরকারি আমদানিকারকদের মাধ্যমে নন-ইউরিয়া সার আমদানি করে আসছে। নন-ইউরিয়া সারের আমদানি, বিক্রয় এবং ভর্তুকি বিতরণ/প্রদান প্রক্রিয়া ২০১৫ সালে জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী পরিচালিত হয়।

পরিপত্রের অনুচ্ছেদ ৮(গ)-এর নিয়মে ‘মোট মূল্যে দাখিলকৃত আবেদনপত্র সমূহ থেকে সর্বনিম্ন মূল্যের ক্রমানুসারে বেসরকারি আমদানিকারকদের সার ভর্তুকি অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হবে।’

মূল্যের যৌক্তিকতা যাচাই করতে সমসাময়িক সময়ে বিএডিসি কর্তৃক আমদানিকৃত সার এবং আন্তর্জাতিক বুলেটিন ‘আরগুস’ ও ‘ফার্টিকন’-এর মূল্য তালিকা ব্যবহার করা হয়। এতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পূর্বে সরকারি টেন্ডার পদ্ধতিতে একই দেশের একাধিক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান একসাথে দর প্রস্তাব দিত। এতে দ্বিতীয়, তৃতীয় পর্যায়ের দরদাতারা প্রতিটি টনের জন্য ২০ থেকে ১৫০ মার্কিন ডলারের ব্যবধানের মধ্যে সরবরাহের সুযোগ পেত। এর ফলে সরকার বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হতো এবং মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অপচয় হতো। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর, শুধুমাত্র সর্বনিম্ন দর প্রস্তাবকারী প্রতিষ্ঠানকে সারের ক্রয়াদেশ প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেয়। এটি গত অর্থবছর থেকে কার্যকর করা হয়েছে।

সার আমদানি প্রক্রিয়ায় প্রতি টন সারের বাজারমূল্য, জাহাজ ভাড়া, ডিসচার্জ খরচ এবং স্থানীয় পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ বিবেচনা করে আমদানিকারকরা দেশভেদে দর প্রস্তাব দেয়। সরকার একই সার বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির অনুমতি দেয়, যাতে সার সরবরাহের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত হয়। জাহাজ ভাড়া ও অন্যান্য কারণে একই সারের সিএফআর মূল্য ভিন্ন দেশভেদে পরিবর্তিত হয়। রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় (জি-টু-জি) বিএডিসিও দীর্ঘকাল ধরে একই নিয়মে সার আমদানি করে আসছে।

কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এফওবি মূল্য ও জাহাজ ভাড়া মিলিয়ে প্রতি টন সারের মূল্য নির্ধারণ করা হয় আন্তর্জাতিক বুলেটিন ‘আরগুস’ ও ‘ফার্টিকন’-এর সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী। ফলে দেশে প্রতিটি আমদানিকারককে নির্ধারিত একক মূল্যেই সারা সরবরাহ করতে হয়। কোনো প্রকার পক্ষপাত বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হয়নি।

এ বছরের দর প্রস্তাব প্রক্রিয়ায় কিছু আমদানিকারক সরকারি প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে দেশভেদে ২৫ থেকে ১৫০ মার্কিন ডলার বেশি প্রস্তাব দেয়। সরকার এসব প্রস্তাব গ্রহণ না করে নির্ধারিত দেশের সর্বনিম্ন বা প্রাক্কলিত দরে সারের সরবরাহ নিশ্চিত করেছে।

এর ভিত্তিতে ১৯ আগস্ট ২০২৫ তারিখে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে প্রথম পর্যায়ে ৩০,০০০ মেট্রিক টন টিএসপি, ২,৫৫,০০০ মেট্রিক টন ডিএপি এবং ৯০,০০০ মেট্রিক টন এমওপি সরবরাহের কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে দ্বিতীয় পর্যায়ে ৯০,০০০ টন টিএসপি ও ১,২০,০০০ মেট্রিক টন ডিএপি সরবরাহের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। কার্যাদেশগুলো যাচাই করলেই প্রতীয়মান হবে যে, কোনো সারের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একক দরে সাপ্লাই নিশ্চিত করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, সারের সিএফআর মূল্য দেশভেদে ভিন্ন হওয়া অভিজ্ঞ পেশাদারদের জন্য স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক বিষয়। সার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বুলেটিন দেখলেই বিষয়টি বোঝা সম্ভব।

মন্ত্রণালয় অভিযোগ করেছে, সরকারের স্বচ্ছ ও কঠোর পদক্ষেপের কারণে কিছু সিন্ডিকেট আগের মতো বেশি মূল্যে সার বিক্রি করতে পারেনি। এর প্রতিক্রিয়ায় একটি মহল মন্ত্রণালয়কে নিয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। মন্ত্রণালয় প্রকাশিত সংবাদ/পোস্টের সত্যতা যাচাই না করার জন্য মিডিয়ার প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা অনুযায়ী বর্তমান সরকার একটি বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠনে কাজ করছে। কৃষি মন্ত্রণালয় দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। শাক-সবজি, আলু, পেঁয়াজ, ধান, আমসহ বিভিন্ন ফসলের বাম্পার ফলন এবং অতি প্রতিকূল সময়ে সার সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। কৃষি ও কৃষকের সুরক্ষার জন্য দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’

মন্ত্রণালয় সংবাদমাধ্যমকে অনুরোধ করেছে, সারের আমদানিসহ কৃষিখাত সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রচার করার আগে সব তথ্য যাচাই করতে।