চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী কাল

প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:৪৫ | অনলাইন সংস্করণ

বিশ্ববিখ্যাত চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী আগামীকাল শুক্রবার (১০ অক্টোবর)। দিনটি স্মরণে নড়াইলে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। এসএম সুলতান ফাউন্ডেশন, জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনব্যাপী কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ভোর ৬টায় সুলতান কমপ্লেক্সে পবিত্র কোরআন খতম, সকাল সাড়ে ৭টায় শিশুস্বর্গে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সাড়ে ৯টায় শিল্পীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, এবং এরপর দোয়া মাহফিল। সকাল ১০টায় শুরু হবে শিশুদের আঁকা চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ও সাড়ে ১০টায় হবে আলোচনা সভা এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।

জেলা প্রশাসক ও সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি শারমিন আক্তার জাহান জানান, সুলতানের স্মরণে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

শিল্পীর জীবন ও কর্ম
১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইল শহরের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এস এম সুলতান। তাঁর পিতা মেছের আলী ছিলেন রাজমিস্ত্রি। ছোটবেলা থেকেই শিল্পচর্চায় আগ্রহী সুলতানের প্রতিভা নজরে পড়ে স্থানীয় জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের। তাঁর সহায়তায় সুলতান কলকাতায় যান এবং অধ্যাপক সায়েদ সোহরাওয়ার্দির মাধ্যমে ভর্তি হন কলকাতা আর্ট কলেজে। একাডেমিক যোগ্যতা না থাকলেও ১৯৪১ সালে বিশেষ বিবেচনায় তাকে ভর্তি করা হয়।

১৯৪৪ সালে তৃতীয় বর্ষে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন তিনি। কিন্তু প্রথাগত শিক্ষার সীমায় নিজেকে আটকে রাখতে পারেননি। ছাত্রাবস্থায়ই কলেজ ছেড়ে কাশ্মীরে উপজাতিদের জীবনের চিত্র অঙ্কনে মগ্ন হন। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, পাকিস্তানসহ নানা দেশে সফর করেন এবং আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশ নেন।

১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি দেশে ফিরে জন্মভূমি নড়াইলেই থিতু হন সুলতান। শিশুদের জন্য ‘শিশুস্বর্গ’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ফাইন আর্ট স্কুল গড়ে তোলেন। ১৯৮০ সালে শুরু করেন শিশুস্বর্গের নির্মাণকাজ। ১৯৯২ সালে তিনি নির্মাণ করেন ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের ‘ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ’ নামের একটি দ্বিতল নৌকা, যেখানে শিশুদের নিয়ে নদীতে ঘুরে চিত্রাঙ্কন শেখাতেন।

তার চিত্রের বিষয়বস্তু
সুলতানের চিত্রকর্মে ফুটে উঠেছে বাংলার কৃষক, শ্রমজীবী মানুষ, নদী-খাল, প্রান্তর ও প্রকৃতির বিভিন্ন রূপ। ১৯৪৬ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ভারতে সিমলা, পাকিস্তানের লাহোর-করাচি, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক-বোস্টন-মিশিগান, যুক্তরাজ্যের লন্ডনসহ নানা দেশে এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ঢাকায় তার শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়।

শিল্পচর্চার পাশাপাশি বাঁশি বাজাতেন সুলতান। পুষতেন নানা প্রাণী—সাপ, বানর, ভল্লুক, ময়না, খরগোশ, গিনিপিক, এমনকি ষাঁড়ও। বাড়িতে তৈরি করেছিলেন এক ধরনের ক্ষুদ্র প্রাণীবাগান।

সম্মাননা ও মৃত্যুবরণ
চিত্রকলায় অসামান্য অবদানের জন্য সুলতান পেয়েছেন একুশে পদক (১৯৮২), স্বাধীনতা পদক (১৯৯৩), চারুশিল্পী সম্মাননা (১৯৮৬), এবং ছিলেন সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত রেসিডেন্ট আর্টিস্ট (১৯৮৪)।

১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। সমাহিত করা হয় নিজ বাড়ির আঙিনায়। তার স্মৃতিকে ধরে রাখতে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা।