বায়ুদূষণ রোধে ৯ নির্দেশনা বাস্তবায়নের নির্দেশ হাইকোর্টের

প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:২৯ | অনলাইন সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

বায়ু দূষণ রোধে সাড়ে ছয় বছরের বেশি সময় আগে উচ্চ আদালতের দেওয়া ৯ নির্দেশনা আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে, এ বিষয়ে আগামী ৩০ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দিয়েছেন আদলত।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) এ সংক্রান্ত বিষয়ে করা সম্পূরক আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান এবং বিচারপতি উর্মি রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এ সময় আদালত বর্তমানের বায়ুদূষণের পরিস্থিতি ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন।

এদিন আদালতে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুনতাসির উদ্দিন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. শাহজাহান, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খসরুজ্জামান। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুরশিদ আক্তার। আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। 

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, সম্প্রতিক সময়ে বায় দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়াই এ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি সম্পূরক আবেদন করা হয়। আবেদনটি পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে আইনজীবী ছারওয়ার আহাদ চৌধুরী দায়ের করেন। সেই আবেদনে শুনানি নিয়ে ঢাকার বায়ু দূষণ বন্ধে আদালতের ৯ দফা নির্দেশনা ৩ সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আবেদনের শুনানিতে মনজিল মোরসেদ বলেন, এরই মধ্যে আদালতের নির্দেশনা অনুসারে কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণ করায় গত বছর ঢাকায় বায়ুর মান উন্নীত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে বিবাদীপক্ষ থেকে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ঢাকার বায়ু দূষিত হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, ফলে বায়ুর মধ্যে থাকা বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান মানুষের ফুসফুসে প্রবেশ করে বিভিন্নভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এ ব্যাপারে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টের তথ্য মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। সুতরাং ঢাকায় বসবাসরত মানুষের জীবন রক্ষার্থে জরুরি ভিত্তিতে বিবাদীদের ওপর আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন। 

তিনি জানান, শুনানি শেষে আদালত আদেশ দিয়ে ৯ দফা নির্দেশনা আগামী ৩ সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবায়ন করে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে। ৩০ নভেম্বর এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ঢাকার বায়ু দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সেদিন রুল জারি করেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট ঢাকার বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে নয় দফা নির্দেশনা প্রদান করে। নির্দেশনাগুলোর মধ্যে ছিল—ঢাকায় মাটি, বালি, বর্জ্য পরিবহনকৃত ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহনে মালামাল ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক করা এবং নির্মাণাধীন এলাকায় মাটি, বালি, সিমেন্ট, পাথরসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে রাখা। এছাড়া সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নিয়মিত রাস্তায় পানি ছিটানো, রাস্তা, কালভার্ট, কার্পেটিং ও খননকাজে টেন্ডারের শর্ত যথাযথভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

একই সঙ্গে হাইকোর্ট কালো ধোঁয়া নিঃসরণকারী যানবাহন জব্দ করা, সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী গাড়ির চলাচলের সময়সীমা নির্ধারণ এবং মেয়াদোত্তীর্ণ যান চলাচল বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। এছাড়া অবৈধ ইটভাটা ও পরিবেশ লাইসেন্সবিহীন টায়ার ফ্যাক্টরি বন্ধ করা, বাজার ও দোকানের বর্জ্য ব্যাগে ভরে নিয়মিত অপসারণ নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়।