অনলাইন সংস্করণ
১১:৪৫, ৩১ অক্টোবর, ২০২৫
দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন আগামীকাল শনিবার ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে। দ্বীপটির নাজুক পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য এবং সামুদ্রিক প্রতিবেশ রক্ষায় গত বছরের মতো এবারও কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে সরকারের ১২টি নির্দেশনা। এ উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও সৌন্দর্য রক্ষায় এবার নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে এবার পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল টেকনাফ ঘাট থেকে নয়, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে পরিচালিত হবে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উপ-পরিচালক মহিবুল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের অবশ্যই ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টাল থেকে অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। প্রতিটি ই-টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে, যা না থাকলে তা নকল হিসেবে বিবেচিত হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, বেপরোয়া পর্যটক সমাগম এবং পরিবেশ দূষণের কারণে সেন্টমার্টিন এক সময় গুরুতর পরিবেশ সংকটে পড়ে। তবে গত নয় মাস পর্যটক চলাচল বন্ধ থাকায় দ্বীপে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ব্যাপকভাবে ফিরতে শুরু করেছে। সৈকতে শামুক–ঝিনুকের সংখ্যা বেড়েছে, লাল কাঁকড়ার চলাচল বেড়েছে এবং মা কাছিমের ডিম পাড়ার পরিবেশ ফিরে এসেছে।
পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ইয়েস কক্সবাজারের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক বলেন, সীমিত পর্যটনই সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে পারে। তিনি সরকারের উদ্যোগকে সময়োপযোগী বলে মন্তব্য করেন।
সরকারি প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনা অনুসারে, নভেম্বর মাসে শুধুমাত্র দিনের বেলা ভ্রমণের অনুমতি থাকবে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাত্রিযাপন করা যাবে। ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক দ্বীপে প্রবেশ করতে পারবেন।
সৈকতে রাতে আলো জ্বালানো, উচ্চ শব্দ সৃষ্টি ও বারবিকিউ করা যাবে না। কেয়াবনে প্রবেশ ও কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রি নিষিদ্ধ। কাছিম, শামুক–ঝিনুক, প্রবালসহ যেকোনো সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। মোটরসাইকেল, সি–বাইকসহ মোটরচালিত যান চলাচলও বন্ধ থাকবে।
নিষিদ্ধ পলিথিন বহন নিষিদ্ধ এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হবে। ব্যক্তিগত পানির ফ্লাস্ক ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, প্রবাল, শৈবাল, কাছিম, সামুদ্রিক মাছ, রাজকাঁকড়া, পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ প্রায় এক হাজার ৭৬ প্রজাতির জীববৈচিত্র্যের অধিবাস সেন্টমার্টিন। অতিরিক্ত চাপের কারণে এতদিন তা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছিল।
সরকার আশা করছে, নতুন নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা মেনে চললে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পরিবেশবান্ধব পর্যটনের আন্তর্জাতিক উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।