যে পাঁচ অভিযোগের ভিত্তিতে শেখ হাসিনার মামলার রায় আজ

প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৫০ | অনলাইন সংস্করণ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় আজ ঘোষণা করা হবে। এই মামলার রায় দেবেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগের ভিত্তিতে রায় ঘোষণার আয়োজন করা হয়েছে। গতবছর ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর এটি প্রথমবারের মতো কোনো মামলার বিচারের রায়।

গত ১০ জুলাই সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি এবং অন্যান্য অভিযোগের ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। গত ২ জুলাই আদালত অবমাননার দায়ে শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন একই ট্রাইব্যুনাল।

শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনার সরকারের কঠোর দমননীতিতে বহু মানুষ হতাহত হন। মামলায় দেড় হাজারের বেশি মানুষকে হত্যার উস্কানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি এবং জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ।

প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্যের পর তৎকালীন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ছাত্র-জনতার ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্র “আওয়ামী সন্ত্রাসীদের” মাধ্যমে আক্রমণ চালান। এর মধ্যে হত্যার চেষ্টা, নির্যাতন ও অন্যান্য অমানবিক আচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের হত্যার উদ্দেশ্যে হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপি ওই নির্দেশ বাস্তবায়নে সহায়তা ও সম্পৃক্ত ছিলেন।

তৃতীয় অভিযোগে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ১৬ জুলাই এক শিক্ষার্থীকে বিনা উস্কানিতে হত্যা করার ঘটনায় আসামিদের প্ররোচনা, নির্দেশ ও সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়েছে।

চতুর্থ অভিযোগে ঢাকার চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হত্যাকাণ্ড চালানোর ঘটনায় আসামিদের দোষ প্রমাণিত হয়েছে।

পঞ্চম অভিযোগে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার আশপাশে আন্দোলনরত ছয় শিক্ষার্থীকে হত্যা ও অমানবিকভাবে নির্যাতনের ঘটনা ঘটানো হয়। আসামিদের নির্দেশ, প্ররোচনা ও সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়েছে।

মামলায় ৫৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের পরিবার, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ এবং সাংবাদিকরা।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ২০ ধারায় বলা হয়েছে, অভিযুক্তের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যেতে পারে। ট্রাইব্যুনাল আসামির অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী যাবজ্জীবন, আমৃত্যু কারাদণ্ড বা অন্যান্য মেয়াদের সাজাও দিতে পারবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম জানিয়েছেন, আসামিদের অপরাধের গভীরতা এবং সম্পৃক্ততা অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল যে কোনো শাস্তি দিতে সক্ষম।