হাসিনা যে কারণে আপিল করতে পারবেন না, জানালেন প্রসিকিউটর
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:২৮ | অনলাইন সংস্করণ

জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির রায় সোমবার ঘোষণা হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে এটি প্রথম মামলা, যার রায় সরাসরি সম্প্রচারের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করবেন। অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। প্রধান আসামি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। অন্য দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। হাসিনা ও আসাদুজ্জামান বর্তমানে ভারত অবস্থানরত এবং পলাতক হিসেবে চিহ্নিত।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম জানান, রায়ে সাজা হলে পলাতক অবস্থায় থাকা হাসিনা ও আসাদুজ্জামান আপিল করতে পারবেন না।
ট্রাইব্যুনাল আইনে স্পষ্ট বলা আছে, রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হলেও সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে অবশ্যই আত্মসমর্পণ করতে হবে অথবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হতে হবে।
প্রসিকিউটর আরও বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধিতে নারী, অসুস্থ, কিশোর বা শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা থাকলেও রায় প্রদানের ক্ষেত্রে নারী হিসেবে আলাদা কোনো সুবিধা নেই। ট্রাইব্যুনাল আইনেও এর কোনো বিশেষ ব্যবস্থা নেই।
রাষ্ট্রপক্ষ দাবি করেছে, হাসিনা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মাস্টারমাইন্ড, হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার ছিলেন। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাসিনা হত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তবে প্রসিকিউটর বলেন, ট্রাইব্যুনালে হাজির না হয়ে দেওয়া বক্তব্য আইনের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়।
গ্রেপ্তার একমাত্র আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার কাছ থেকে ছাত্র আন্দোলন দমন করার জন্য প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের সরাসরি নির্দেশ পেয়েছিলেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসিনার নির্দেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে মারণাস্ত্র ব্যবহার করে নিরীহ, নিরস্ত্র দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে এবং ৩০ হাজার মানুষ আহত হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষ সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছে এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে শহীদ পরিবার ও আহত আন্দোলনকারীদের মধ্যে হস্তান্তরের আবেদন জানানো হয়েছে। হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণের দাবি করা হয়েছে, যা হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান, প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ, রংপুরে এক ছাত্রকে গুলি করে হত্যা, রাজধানীর চানখাঁরপুলে আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা, এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।
প্রসিকিউটর জানান, ট্রাইব্যুনালের আদেশ যাই হোক, প্রসিকিউশন তা মেনে নেবে এবং হাসিনাকে শাস্তি দিলে ইন্টারপোলে তার বিরুদ্ধে কনভিকশন ওয়ারেন্টের আবেদন করা হবে।
