আকাশের যত তারা, আইনের তত ধারা: অ্যাটর্নি জেনারেল

প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:২৬ | অনলাইন সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, সাংবাদিক নিবর্তনের জন্য রাষ্ট্র অনেক রকম পথ খোলা রেখেছে। যেটা বলা হয়—আকাশের যত তারা, আইনের তত ধারা। সাংবাদিকদেরকে নিবর্তনের জন্য, নিয়ন্ত্রণের জন্য আকাশের সব রকম তারার মতো আইনের ধারা প্রয়োগ করা হয়।

সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন ২০২৫’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তিনি ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশ: ভবিষ্যত বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা’ শীর্ষক একটি পর্বে বক্তব্য দেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল করে সবার সঙ্গে আলোচনা করে যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আওয়ামী লীগ সরকার করেছিল, সেটা ছিল সবার সঙ্গে প্রতারণা।

আসাদুজ্জামান বলেন, আপনারা মনে করেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিক দমনের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু আমি যেটা দেখছি, শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নয়, সাংবাদিক দমনের জন্য রাষ্ট্রের আরও বহু পথ খোলা আছে। আমরা দেখতে পাই, রাষ্ট্রের হাতে যখন অন্য কোনো আইনি ভিত্তি থাকে না, তখন সহজেই সেডিশন (রাষ্ট্রদ্রোহ) ধারা ব্যবহার করা হয়। 

তিনি আরও বলেন, এই যে একটি প্রবণতা তৈরি হয়েছে, এ প্রবণতা পরিবর্তন করতে হলে রাষ্ট্রের মানসিকতা বদলাতে হবে। রাষ্ট্র এবং যারা রাজনৈতিক নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করেন, তাদের মানসিকতায় পরিবর্তন না এলে শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করেই সমস্যার সমাধান হবে বলে আমি মনে করি না।

সাংবাদিকের বিরুদ্ধে নিবর্তনমূলক আইন ১৮৬০ সাল থেকেই আছে জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, পেনাল কোডের ৪৯৯ ধারায় মানহানির সংজ্ঞা, ৫০০ ধারায় মানহানির শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই আইন দিয়েই একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ আছে ১৮৬০ সাল থেকেই। তার সঙ্গে রয়েছে টরশিয়াস লায়াবিলিটি, যেখানে সিভিল কোর্টে ক্ষতিপূরণের জন্য মামলা করা যায়। 

‘কিন্তু এগুলো দ্রুত প্রয়োগ করা যায় না বলে সময়ে সময়ে কালো আইন করতে হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন। এই আইনে প্রিজুডিশিয়াল আইনের সংজ্ঞায় বলা আছে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, জনস্বার্থ, এমনকি মানহানির বিষয়ও। অর্থাৎ রাষ্ট্র চাইলে বিশেষ ক্ষমতা আইন ব্যবহার করে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা আইসিটি আইন না থাকলেও, একজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করতে পারে, হয়রানি করতে পারে।’—যোগ করেন তিনি।

আসাদুজ্জামান বলেন, এই আইনে প্রথম সাংবাদিক গ্রেপ্তার হয় ১৯৭৫ সালে, দৈনিক হলিডের সম্পাদক এনায়েতুল্লাহ খান। এরপর ফাইজুর রহমান, মুখপাত্র পত্রিকার সম্পাদক, তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। সেই বছরই পাঁচটি পত্রিকাকে শোকজ দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, সাংবাদিকদের ন্যারেটিভ বদলাতে হবে। সাংবাদিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে যেমন আপনারা সোচ্চার হন, তেমন নাগরিক অধিকার রক্ষার প্রশ্নেও কণ্ঠ তুলুন।’

এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, নির্বাচিত সরকার এলে সিএসএ (সাইবার নিরাপত্তা আইন), সিএসও (সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশ) বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবে, ওটা তারাই বলবে। তবে আমি মনে করি, সব ধরনের নিবর্তনমূলক আইনের পথ থেকে ফিরে আসা উচিত। সাংবাদিক, নাগরিক ও রাষ্ট্র- তিন পক্ষের মধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পথ তৈরি করতে হবে। 

তিনি জানান, এ সংক্রান্ত যে মামলাগুলো তদন্তে আছে, যেগুলো বিচারাধীন, সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টে দেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে তিনি নিজে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন।

আসাদুজ্জামান বলেন, আমি চাই, সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে যে বাক-স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে তার বাস্তব প্রয়োগ হোক, যুক্তিসঙ্গত সীমারেখা বজায় রেখে। একটি ভয়হীন সমাজ চাই। যেখানে সত্যকে বলা যাবে যত কঠিনই হোক। আমি সবসময়ই বলেছি, এখনো বলছি, নাগরিক অধিকারের জন্য প্রয়োজন হলে জীবন দিতেও প্রস্তুত।