অনলাইন সংস্করণ
১৬:৪৯, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫
নির্বাচনী প্রচারণা শেষে ফেরার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে সিঙ্গাপুর জেনারেল হসপিটালে চিকিৎসাধীন শরীফ মো. ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন রয়েছে। চিকিৎসকদের সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, তার অবস্থায় উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আসেনি এবং তিনি এখনো জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন।
নিউরোসার্জনদের ভাষায়, হাদির চিকিৎসায় একটি নির্দিষ্ট ‘টাইম উইন্ডো’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে সিঙ্গাপুরে হাদির চিকিৎসা পরিস্থিতি নিয়ে হাসপাতালটির চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জন ও তার চিকিৎসায় যুক্ত ডা. আব্দুল আহাদ।
তিনি জানান, জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ঢাকায় অস্ত্রোপচার ও নিবিড় চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাদিকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সিঙ্গাপুর জেনারেল হসপিটালের ইমার্জেন্সি কমপ্লেক্সে ভর্তি করার পর থেকেই নিউরোসার্জারি ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার টিম যৌথভাবে তার চিকিৎসা শুরু করে।
সেখানে করা সর্বশেষ ব্রেন সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে, হাদির বাম পাশের ইস্কেমিক পরিবর্তন এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। একই সঙ্গে ব্রেনে ফোলা বা ইডেমা কমেনি। ব্রেন স্টেমে আঘাতের কারণে মস্তিষ্কের ভেন্ট্রিকুলার সিস্টেমে যে চাপ তৈরি হয়েছে, সেটিও চিকিৎসকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
চিকিৎসকদের বরাতে ডা. আব্দুল আহাদ আরও জানান, বর্তমানে হাদির কিডনি, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুস কৃত্রিম ভেন্টিলেশনের সহায়তায় সচল রাখা হয়েছে। তার গ্লাসগো কোমা স্কেল (জিসিএস) স্কোরেও এখনো কোনো পরিবর্তন আসেনি। অর্থাৎ নিউরোলজিক্যাল রেসপন্সে দৃশ্যমান উন্নতি বা অবনতি—কোনোটিই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
চিকিৎসকদের মতে, এই পর্যায়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সময়। ব্রেন ইনজুরির ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বা ‘টাইম উইন্ডো’ থাকে, যার মধ্যে শরীর যদি ইতিবাচক সাড়া দেয়, তাহলে পরবর্তী অবস্থার সম্ভাবনা তৈরি হয়। সেই সময়ের মধ্যেই হাদির শরীর কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় কি না, সেদিকেই এখন চিকিৎসকদের মূল নজর।
ডা. আহাদ জানান, হাদির ফুসফুসের সর্বশেষ সিটি স্ক্যানেও আগের মতো রক্তের উপস্থিতি দেখা গেছে। এ কারণেই বাংলাদেশে থাকার সময় তার বুকে চেস্ট ড্রেন দেওয়া হয়েছিল। সিঙ্গাপুরেও সেই জটিলতা বিবেচনায় রেখে শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যবস্থাপনা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন দাবিকে নাকচ করেছেন চিকিৎসকরা। ডা. আহাদ স্পষ্ট করে জানান, হাদি চোখ খুলেছেন বা তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে—এ ধরনের তথ্য সত্য নয়। তার অবস্থা এখনো স্ট্যাটিক, অর্থাৎ আগের অবস্থাতেই রয়েছে। জ্ঞান ফিরে আসার সম্ভাবনা নিয়েও চিকিৎসকরা এই মুহূর্তে কোনো নিশ্চিত পূর্বাভাস দিতে পারছেন না।
তবে চিকিৎসকরা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও অনেক সময় অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন ঘটে। সে আশাতেই সর্বোচ্চ চিকিৎসা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
চিকিৎসকদের পাশাপাশি হাদির পরিবার ও সহকর্মীরাও দেশবাসীর কাছে তার জন্য দোয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে গুজব বা অনুমানভিত্তিক তথ্য না ছড়িয়ে দায়িত্বশীল থাকার অনুরোধও জানানো হয়েছে।