‘ফুড সেফটি নিশ্চিত না হলে মাছের উৎপাদন বাড়ানোর অর্থ নেই’
প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:৫০ | অনলাইন সংস্করণ

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, কৃষিভিত্তিক উৎপাদন সম্প্রসারণের ফলে দেশে মাছের সরবরাহ বেড়েছে, কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে নতুন চ্যালেঞ্জও সৃষ্টি হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো খাদ্য নিরাপত্তা। তিনি বলেন, ফুড সেফটি নিশ্চিত না হলে মাছের উৎপাদন বাড়ানোর কোনো অর্থ নেই। একুয়াকালচারে উৎপাদিত মাছ যদি নিরাপদ না হয়, তবে সেটিকে প্রকৃত অর্থে মাছ বলা যায় না।
আজ সকাল বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ ফিশারিজ রিসার্চ ফোরাম (বিএফআরএফ)-এর উদ্যোগে ১০ম দ্বিবার্ষিক মৎস্য সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ফরিদা আখতার আরও বলেন, মাছ শুধু পেট ভরানোর খাদ্য নয়, এটি বিশেষ পুষ্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। মাছের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ও ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়, যা চোখ, হাড় ও মেধা বিকাশে সহায়ক। বাঙালির মেধা বিকাশেও মাছভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
তিনি সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশ এখনো এর পূর্ণ সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার করতে পারেনি; বর্তমানে মাত্র প্রায় ৩০ শতাংশ সম্পদ ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়াও, আর্টিসনাল ট্রলার ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার ভিন্ন ভিন্ন পথে মাছ ধরছে এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারে ব্যবহৃত কিছু প্রযুক্তি উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।
তিনি উল্লেখ করেন, সমুদ্রে সাতবার গিয়ে একবার মাছ পাওয়ার পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনি একবারে সব মাছ তুলে আনার জন্য সোনার (সাউন্ড নেভিগেশন অ্যান্ড রেঞ্জিং) প্রযুক্তির ব্যবহারও সঠিক নয়।
উপদেষ্টা জানান, সম্প্রতি জানা গেছে ২২৩টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারের মধ্যে প্রায় ৭০টিতে সোনার প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে, যার ফলে সমুদ্রে ওভারফিশিংয়ের ঝুঁকি বেড়েছে। এসব সমস্যা মোকাবিলায় কার্যকর নীতিমালা প্রণয়নের গুরুত্বের ওপর তিনি জোর দেন।
তিনি আরও বলেন, ক্ষতিকর মাছ ধরার গিয়ার ব্যবহারে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যকে হুমকি তৈরি হচ্ছে; ইলেকট্রিক শক ব্যবহার করে মাছ ধরা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়া, মৎস্যজীবীদের জন্য প্রণোদনার ক্ষেত্রে বৈষম্য বিদ্যমান। কৃষি খাতের তুলনায় মৎস্যজীবীরা যথাযথ সহায়তা পান না, যা অনেক সময় নিয়ম লঙ্ঘনে বাধ্য করছে।
নদীর নাব্যতা হ্রাস, দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইলিশের প্রজনন ও মাইগ্রেশন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। উপদেষ্টা বলেন, ইলিশ শুধু একটি মাছ নয়, এটি জাতীয় সম্পদ; ডলফিন রক্ষার মতো ইলিশ সংরক্ষণও বৈশ্বিক আন্দোলনের অংশ হওয়া উচিত। ইলিশের মাইগ্রেশন রুটে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে ড্রেজিং কার্যক্রমের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়ার্ল্ডফিশ বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. ফারুক-উল ইসলাম। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে এফএও প্রতিনিধি (অ্যাড-ইন্টারিম) ড. দিয়া সানো।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভাদ্রা এবং এসিআই পিএলসি-এর গ্রুপ অ্যাডভাইজার ড. এফ. এইচ. আনসারী।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএফআরএফ-এর সভাপতি ড. জোয়ার্দার ফরুক আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন মহাসচিব ড. মো. মনিরুল ইসলাম এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সহ-সভাপতি ড. মো. খালেদ কানক।
