ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। যুবলীগের ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা চলছে জোড়াতালি দিয়ে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকেও সংগঠনকে শক্তিশালী করার পরিবর্তে কেবল বিতর্কে জড়িয়েছেন নেতারা। একদশক ধরে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ যুবলীগের সম্মেলন না হওয়াও যেনো দায়সার ভাব নিয়ে চলছে সাংগঠনিক কার্যক্রম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখার ওয়ার্ড কমিটিগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ। হয়নি পূর্ণাঙ্গও। রয়েছে ২২ বছর, ১৮ বছরের আগের কমিটিও। দক্ষিণ যুবলীগের ৭৫টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড রয়েছে। টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও ৭৫টি ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করতে পারেনি দক্ষিণ যুবলীগ। ৭৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে কমিটি রয়েছে, মাত্র ৪০টি ওয়ার্ডে। আবার এই ৪০টি ওয়ার্ডে বেশির ভাগ কমিটির মেয়াদ নেই, হয়নি পূর্ণাঙ্গও। বেশির ভাগ কমিটি ৫ সদস্য বিশিষ্ট্য। আবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক; দুই সদস্য বিশিষ্ট্য কমিটিও রয়েছে কয়েকটি ওয়ার্ডে। বাকি ৩৫টি ওয়ার্ডে নেই যুবলীগের কমিটি।
ক্যাসিনো ক্যালেঙ্কারিসহ নানান অপরাধে দক্ষিণ যুবলীগের নেতাদের নাম আসে । পরে দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ ভূইয়াকে বহিস্কার করে সংগঠনটি। শুদ্ধি অভিযানে সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ ভূইয়াকে গ্রেফতারে আরও ঝিমিয়ে পড়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ। এ সুযোগে সম্রাটের অনুসারীরা কেটে পরে সংগঠন থেকে। গা ঢাকা দেন নিজেদেরকে বাঁচানো জন্য। একটি পরিবর্তনশীল পরিস্থিতর মধ্য দিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ। সম্রাটকে গ্রেফতারের পর বিভিন্ন ওয়ার্ড যুবলীগের নেতাদের মধ্যেও গা ছাড়া ভাব লক্ষ্য করা গেছে। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকে যেনো ভারাক্রন্ত হয়ে উঠেছে সংগঠনটি। ভারপ্রাপ্ত নেতৃত্ব কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে শুধু রুটিন ওয়ার্ক করছেন।
উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক ওয়ার্ড গুলোতেও হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে। ৬৮টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের মধ্যে কমিটি নেই, ১৮ ওয়ার্ডে। অর্ধেকের বেশি ওয়ার্ড কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে কয়েক বছর আগেই। কোনো ওয়ার্ডেই হয়নি পূর্ণাঙ্গ। রয়েছে ২২ বছর, ১৮ বছরের মত পুরানো কমিটিও। ২০০৪, ২০০৬ সালে দেওয়াও কমিটি রয়েছে উত্তর যুবলীগের আওতাধীন ওয়ার্ডে। ২২ বছরের পুরানো কমিটির কেউ আসেনা উত্তর যুবলীগের কর্মসূচিতে। অনেকে আবার হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা। উত্তর যুবলীগেরও সম্মেলন হয় না একদশক।
ঢাকা মহানগর যুবলীগের সম্মেলন না হওয়ায় হতাশায় ভূগছে সাবেক ছাত্রনেতারা। যারা নগর যুবলীগে শ্রম-ঘাম দিয়ে যাচ্ছে, তারাও এখন হাঁপিয়ে উঠেছে। কবে নাগাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন কমিটি হবে তা জানে না ঢাকা মহানগর যুবলীগে পদপ্রত্যাশীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সাবেক ছাত্রনেতা আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ যুবলীগের সম্মেলন হয়েছে ১০ বছর আগে। ২০১৯ সালে একটি পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় সম্মেলন হয়। আমারা ভেবেছিলাম কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে-পরে ঢাকা মহানগরের সম্মেলন হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সম্মেলন হলেও তবে ঢাকা মহানগর উত্তর-দিক্ষণের কোনো সম্মেলন হয় নি।
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করার চেষ্টা করছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন ও বিশৃংখলা-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে মাসব্যাপী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে সংগঠনটি। প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিএনপির আন্দোলনের প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছে সংগঠনের নেতারা। তবে কেন্দ্রীয় যুবলীগের পক্ষ থেকে নির্বাচনী কেন্দ্র ভিত্তিক ইউনিট কমিটি গঠনেরও নির্দেশনা রয়েছে। কেন্দ্রীয় নিদের্শনায় নড়েচড়ে বসেছে দক্ষিণ যুবলীগের নেতারা। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ইউনিট ভিত্তিক কমিটি গঠনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছেন। এরই মধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে নগর নেতাদের সমন্বয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট্য সাংগঠনিক টিম তৈরি করে দায়িত্ব দিচ্ছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইনুদ্দিন রানা আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, কতটি ওয়ার্ডে কমিটি আছে, কতগুলো ওয়ার্ডে কমিটি নেই, এটা তো মুখস্ত নয়। এবিষয়ে অফিসে ফাইল আছে। তবে বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটির নিদের্শনায় ভোট কেন্দ্র ভিত্তক কমিটি গঠনের কাজ করছি। ৩০ দিনের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন করতে হবে। কেন্দ্র ভিত্তিক কমিটি করার পূর্বে প্রার্থীদের থেকে আমরা সিভি নিব। পরবর্তীতে ওয়ার্ড কমিটিগুলো চেয়ারম্যান-সেক্রেটারির নিদের্শনায় হবে। কেন্দ্রীয় নিদের্শ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণে সম্মেলন কারার সুযোগ নেই।
উত্তর যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, কেন্দ্র ভিত্তিক কমিটি গঠনের নিদের্শনা রয়েছে আমাদের। তবে আমরা এখনও শুরু করিনি। কয়েক দিন পরে শুরু করবো। আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগের সম্মেলন নিয়ে এই মুহূর্তে ভাবছি না। এখন আমরা ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলার কমিটি নিয়ে কাজ করছি। পরে ঢাকা মহানগর ধরব।
তথ্যমতে, যুবলীগের ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেসের আগে ২০১২ সালের ৩ জুলাই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও ৮ জুলাই ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সম্মেলন হয়। এতে মহানগর উত্তরে মাইনুল হোসেন খান নিখিল (বর্তমানে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক) সভাপতি ও ইসমাঈল হোসেন সাধারণ সম্পাদক এবং মহানগর দক্ষিণে (বহিস্কৃত) ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাট সভাপতি ও ওয়াহিদুল আলম আরিফ সাধারণ সম্পাদক হন।
২০১৩ সালের ২৯ জুলাই টেন্ডার নিয়ে দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কি হত্যাকা-ের পর গা ঢাকা দেন দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল আলম আরিফ। তার পরিবর্তে যুগ্ম-সম্পাদক এইচএম রেজাউল করিমকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর ক্যাসিনোকা-ে গ্রেফতার হন যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। ২২ অক্টোবর সেখানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয় সহ-সভাপতি মাইনুদ্দিন রানাকে। এরপর ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেস হয়। সেখানে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির বড় ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশকে চেয়ারম্যান ও ঢাকা উত্তর শাখার সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। পরে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. জাকির হোসেন বাবুলকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়।