ডাকসুতে ২৮ পদের ২৩টিতেই জয় ছাত্রশিবিরের
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪৫ | অনলাইন সংস্করণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ৩৮ তম নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’। সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সহ ২৮টি পদে ২৩টিতেই বিজয়ী হয়েছে এই প্যানেলের প্রার্থীরা।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিনেট ভবনে আনুষ্ঠানিক ফলাফলে তাদের নাম ঘোষণা করেন ডাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।
ভিপি পদে ছাত্রশিবির প্যানেলের মো. আবু সাদিক (সাদিক কায়েম) পেয়েছেন ১৪ হাজার ৪২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের আবিদুল ইসলাম খান ৫ হাজার ৭০৮ ভোট পেয়েছেন।
জিএস পদে ১০ হাজার ৭৯৪ ভোট পেয়ে জয়ী হন এসএম ফরহাদ। তিনিও ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে লড়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল নেতা তানভীর বারী হামীম পেয়েছেন ৫ হাজার ২৮৩ ভোট। এছাড়া বামপন্থী শিক্ষার্থীদের জোট প্রতিরোধ পর্ষদের মেঘমল্লার বসু ৪ হাজার ৯৪৯ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন।
এজিএস পদেও বিজয়ী হন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের মুহা. মহিউদ্দীন খান। তিনি পেয়েছেন ১১ হাজার ৭৭২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৪ ভোট।
এছাড়া আরও ২০ পদে বিজয় লাভ করেছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ফাতেমা তাসনিম জুমা পেয়েছেন ১০ হাজার ৬৩১ ভোট। ৭ হাজার ৮৩৩ ভোট পেয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে জয়ী হন ইকবাল হায়দার। আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে জুলাইয়ে চোখ হারানো খান জসিম পেয়েছেন ৯ হাজার ৭০৬ ভোট।
ছাত্র পরিবহন সম্পাদক হিসেবে লড়ে আসিফ আবদুল্লাহ পেয়েছেন ৯ হাজার ৬১ ভোট। ৭ হাজার ২৫৫ ভোট পেয়ে ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন আরমান হোসাইন। কমন রুম, রিডিং রুম ও কাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে উম্মে ছালমা পেয়েছেন ৯ হাজার ৯২০ ভোট। ১১ হাজার ৭৪৭ ভোট পেয়ে মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক হন সাখাওয়াত জাকারিয়া।
স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে এমএম আল মিনহাজ পেয়েছেন ৭ হাজার ৩৮ ভোট। এছাড়া ৯ হাজার ৩৪৪ ভোট পেয়ে ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক বিজয় ছিনিয়ে আনেন মাজহারুল ইসলাম।
ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট থেকে ডাকসুর সদস্য পদে বিজয়ী হয়েছেন মোট ১১ জন প্রার্থী। সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৪৮ ভোট পেয়ে শীর্ষে রয়েছেন সাবিকুন্নাহার তামান্না। এরপর রয়েছেন সর্বমিত্র (৮,৯৮৮ ভোট), মোছা. আফসানা আক্তার (৫,৭৪৭ ভোট), ইমরান হোসেন (৬,২৫৬ ভোট), রায়হান উদ্দীন (৫,০৮২ ভোট), আনাস ইবনে মুনির ও মেফতাহুল হোসেন আল মারুফ (উভয়েই পেয়েছেন ৫,০১৫ ভোট), তাজিনুর রহমান (৫,৬৯০ ভোট), বেলাল হোসাইন অপু খান (৪,৮৬৫ ভোট), রাইসুল ইসলাম (৪,৫৩৫ ভোট) এবং মো. শাহিনুর রহমান (৪,৩৯০ ভোট)।
প্যানেলের বাইরে বাকি পাঁচটি পদে জয়ী হয়েছেন অন্যান্য স্বতন্ত্র প্রার্থী। সমাজসেবা সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন যুবাইর বিন নেছারী, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ, এবং গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন সানজিদা আহমেদ তন্বী। এছাড়া সদস্য পদে বিজয়ী হয়েছেন হেমা চাকমা এবং উম্মু উসউয়াতুন রাফিয়া।
এর আগে, মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে অনুষ্ঠিত হয় ডাকসুর ৩৮তম নির্বাচন। কোনো বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয় ভোটগ্রহণ। এবারের নির্বাচনে ডাকসুর ২৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মোট ৪৭১ জন প্রার্থী। পাশাপাশি ১৮টি হল সংসদের ১৩টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ২৩৪টি পদের বিপরীতে প্রার্থী ছিলেন ১ হাজার ৩৫ জন।
ডাকসুতে এবার মোট ভোটার ছিলেন ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। এর মধ্যে পাঁচটি ছাত্রী হলে ভোটার সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ৯৫৯ এবং ১৩টি ছাত্র হলে ভোটার ছিলেন ২০ হাজার ৯১৫ জন।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। এটি ১৯২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ' নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালে গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে পূর্বনাম পরিবর্তন করে বর্তমান নাম 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ' গ্রহণ করা হয়। ঢাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সংসদ বলা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এবার সহ ৩৮ বার অনুষ্ঠিত হয়েছে ডাকসু নির্বাচন। এর আগে ডাকসু নির্বাচন হয়েছিলো ২০১৯ সালে।
