জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের তারিখ পরিবর্তন করুন: গোলাম পরওয়ার

প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৫, ১৯:৩৬ | অনলাইন সংস্করণ

জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। 

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, সুযোগ আছে আপনারা জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের তারিখ পরিবর্তন করুন। তা না হলে একটা বিভ্রান্তির ধূম্রজাল আপনারা তৈরি করবেন, ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে কম আসবে। গণভোটে ভোট কম পড়বে, না বুঝে হাতে সিল মারবে, বুঝতে পারবে না। এই সংকট দূর করার দায়িত্ব সরকারকেই গ্রহণ করতে হবে।

রোববার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে জামায়াতসহ আন্দোলনরত ৮ দলের রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। নগরীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। 

অধ্যাপক গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা বলেছিলাম জুলাই জাতীয় সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে গেলে একটি সাংবিধানিক আদেশ জারি করতে হবে। আমরা ধন্যবাদ জানাই সরকার বিলম্বে হলেও সেই জুলাই জাতীয় সনদের সাংবিধানিক আদেশ জারি করেছে, গেজেট প্রকাশ করেছে। কিন্তু দুঃখের সাথে আমরা লক্ষ্য করছি, সেই গেজেটে একই দিনে গণভোটের কথাও বলেছে। 

তিনি বলেন, আমরা সরকারকে বলতে চাই, বাংলাদেশে বহু আইন আপনারা করছেন আর পরিবর্তন করছেন। সরকারের আদেশ, সরকারের তৈরি করা গেজেট, এটা তো আর ওহীর বাণী বা কোরআনের বাণী না যে পরিবর্তন করা যাবে না। আপনারা পরামর্শ করেছেন, এই গেজেটকে পরিবর্তন করতে হবে। এই আদেশ পরিবর্তন করে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে গেলে জাতীয় নির্বাচনের আগে আপনি গণভোটের তারিখ আবার ঘোষণা করুন। আমরা আট দল এবং দেশবাসী সেই দাবি করে যাচ্ছি।

জামায়াতের সেক্রেটারি বলেন, জনগণ জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট চায়। আমরা এমন কোনো সংকটে সরকারকে ফেলতে চাই না, যাতে বহু রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন ভেঙে যাক। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে আপনাদেরকে বারবার বলে যাচ্ছি, সুযোগ আছে আপনারা জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের তারিখ পরিবর্তন করুন। তা না হলে একটা বিভ্রান্তির ধূম্রজাল আপনারা তৈরি করবেন, ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে কম আসবে। গণভোটে ভোট কম পড়বে, না বুঝে হাতে সিল মারবে, বুঝতে পারবে না। এই সংকট দূর করার দায়িত্ব সরকারকেই গ্রহণ করতে হবে।

আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আজকে পত্রিকায় এবং অনলাইনে দেখলাম খুলনার আদালত চত্বরে দিনের বেলায় আদালতে হাজিরা দিয়ে যাওয়ার পথে হামলা করে দুইজনকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যে প্রশাসনে প্রকাশ্যে এভাবে কোর্টের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়, সেই প্রশাসনের দায়িত্বে নির্বাচনের দিন যে ভোট ডাকাতি হবে না, ভোট কেন্দ্রে হত্যা হবে না, আমাদের জানমাল খুন করে ভোটাধিকার লুট করতে চাইবে না—তার কোনো গ্যারান্টি নাই।

নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার আহ্বান জানিয়ে গোলাম পরওয়ার বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলবো, প্রধান উপদেষ্টাকে বলবো—লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও ক্ষমতার সমতা রক্ষা করুন। সব দল যেন সমান অধিকার পায়। কোনো দলকে বড় মনে করবেন না, কোনো দলকে গোপনে ক্ষমতায় আনার স্বপ্ন দেখবেন না। মনে রাখবেন, ফ্যাসিবাদকে যেভাবে আমরা বিদায় করেছি, কোনো দিল্লির ষড়যন্ত্র তাকে ঠেকাতে পারে নাই। আগামীতে যদি ভোট ডাকাতি করে আরেকটি নব্য ফ্যাসিবাদের জন্ম দিতে চান, বাংলার মানুষ বুকের রক্ত দিয়ে তা প্রতিরোধ করবে।

নির্বাচন কমিশনার, ডিসি, এসপি ও বিচারপতিদেরকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১৪, ১৮ ও ২৪ এর ইলেকশনে যারা ভোট ডাকাতি করে হাসিনাকে দাঁড় করিয়েছিল, সেই নির্বাচন কমিশনকে ডেকে জেলে যেতে হয়েছে। পুলিশের আইজিকে চোখের পানি ফেলতে হয়েছে। বায়তুল মোকাররমের খতিবকেও পালিয়ে যেতে হয়েছে। ডিসিদেরকেও আদালতে যেতে হয়েছে। মনে রাখবেন, এই বাংলার মানুষ ২৪-এ ভোট কাটতে আসলে বা অন্য কাউকে ক্ষমতায় বসাতে চাইলে—এই পরিণতি আপনাদেরও ভোগ করতে হবে।

সমাবেশে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির নেতারা বক্তব্য দেন।