ইনকিলাব মঞ্চের সংবাদ সম্মেলন

হাদি হত্যার বিচারে ‘দ্রুত বিচারিক ট্রাইব্যুনাল’ গঠনের দাবি 

প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:১৪ | অনলাইন সংস্করণ

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখ যোদ্ধা শহীদ শরীফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে ‘দ্রুত বিচারিক ট্রাইব্যুনাল’ গঠনের দাবি জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের এ দাবি তুলে ধরেন। 

তিনি বলেন, জুলাই–পরবর্তী বাংলাদেশের জন্য এই হত্যাকাণ্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এ ঘটনায় দৃশ্যমান ও কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে রাষ্ট্রের ওপর জনগণের আস্থা আরও ক্ষুণ্ন হবে। সেজন্য ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা নিতে হবে রাষ্ট্রকে।

বাংলাদেশের অতীতেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় আন্তর্জাতিক সহায়তা নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব বলেন, এ ক্ষেত্রে ওসমান হাদির মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির হত্যাকাণ্ডে সেই পথেই হাঁটতে হবে। কারণ, ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসনের একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী ছিলেন। জুলাই-পরবর্তী সময়ে তিনিই বাংলাদেশের সবচেয়ে সাহসী একজন কণ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কোনো ভয়ভীতি না করেই সব সময় সত্য কথা বলেছেন।

বর্তমান সরকারব্যবস্থার যে আপাত স্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে, এর পেছনেও ওসমান হাদির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
 
আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, ওসমান হাদির রক্ত ঝরেছে আর আমরা যদি খুনিদের বিচার দেখতে না পাই, তা হতে পারে না। জুলাই–পরবর্তী বাংলাদেশের জন্য এ প্রশ্ন কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বিচার নিশ্চিত না হলে দেশে এমন ঘটনা আরও বাড়বে। 

তিনি বলেন, শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করেছে—বাংলাদেশের জনগণ এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চায়। কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, গতকাল (রোববার) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, সেখানে শহীদ ওসমান হাদির নাম বা তার হত্যার বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট অবস্থান আমরা পাইনি। এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দপ্তর থেকে এই ঘটনাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার চেষ্টা করা হয়েছে। তারা মনে করেছে, এই হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়া যাবে। কিন্তু আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই—বাংলাদেশের জনগণ চুপ করে থাকার জাতি নয়।

ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব বলেন, গতকালের বিবৃতিতেই স্পষ্ট, এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আপনাদের (সরকার) কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। কখনো বলেন খুনি ভারতে পালিয়েছে, আবার কখনো বলেন খুনি দেশে রয়েছে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে— বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাজ কী? জনগণের ট্যাক্সের টাকায় তারা কি শুধু সুবিধা ভোগের জন্য বসে আছে?

শহীদ ওসমান হাদি ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তার হত্যাকে যদি এভাবে অবহেলা করা হয়, তাহলে আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই—আমাদের দেওয়া দুই দফা দাবির একটিরও বাস্তবায়ন হয়নি। এখনো খুনির অবস্থান নিশ্চিত করা যায়নি, এমনকি খুনির ড্রাইভারকেও গ্রেপ্তার করা হয়নি। কখনো খুনির পরিবার, কখনো সহযোগীদের ধরে এনে বলা হচ্ছে তারা পর্যাপ্ত তথ্য দিতে পারেনি। তাহলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সক্ষমতা কোথায়?

আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, আমরা দ্বিতীয় যে দাবি জানিয়েছিলাম, সিভিল ও মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী দোসরদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা—সে বিষয়ে আপনারা একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। কোটি কোটি মানুষের দাবিকে এভাবে উপেক্ষা করা চরম দায়িত্বহীনতা।

বাংলাদেশের জনগণ এই সরকারকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব নেয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সরকার যদি বিচার নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই।

ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সম্প্রতি নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছেন। সেই প্রেক্ষাপটে ইনকিলাব মঞ্চ আশা করছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দ্রুত বিচারিক ট্রাইবুনাল গঠন এবং আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সহায়তা নেওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত জানাবে রাষ্ট্র। রাষ্ট্রকে জনগণের সামনে এসে জানাতে হবে—ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচারে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। 

হাদির রক্তের সঙ্গে কোনো ধরনের আপস করা হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমা এবং সংগঠনটির অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।