স্মার্ট গ্রিড প্রকল্পে সাফল্যের ভিত্তিতে জার্মানি ও বাংলাদেশের পরিকল্পনা

প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:৫৭ | অনলাইন সংস্করণ

বাংলাদেশে জার্মান ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত এনার্জি এফিশিয়েন্সি অ্যান্ড গ্রিড ইন্টিগ্রেশন অব রিনিউয়েবল এনার্জি (ইগিরি টু) প্রকল্পের সমাপ্তি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

জার্মান সরকারের পক্ষ থেকে জিআইজেড বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। দেশে জাতীয় গ্রিড আধুনিকায়নে এবং গ্রিডে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যাপক সংযোজনের পথে প্রকল্পটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

২০২১ সালের জুন থেকে ইগিরি টু প্রকল্পটি দেশের জ্বালানি মিশ্রণে সৌরশক্তির অংশ বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি সক্ষমতার উন্নয়নে কাজ করছে। প্রকল্পটি শুধুমাত্র তাত্ত্বিক আলোচনার সীমা ছাড়িয়ে বাস্তব অবকাঠামো ও মানবসম্পদ সক্ষমতা গড়ে তুলেছে, যা একটি আধুনিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য অপরিহার্য।

প্রকল্পটির একটি অন্যতম বড় সাফল্য হল— পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ (PGB)-এ গ্রিড স্টাডিজ অ্যান্ড ইনোভেশন ফ্যাসিলিটি (GSIF) প্রতিষ্ঠা, যা পরবর্তীতে সম্প্রসারিত হয়ে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) এবং নর্দার্ন ইলেকট্রিক সাপ্লাই পিএলসি (নেসকো)-তেও গড়ে তোলা হয়েছে। এ উদ্যোগ গ্রিড অবকাঠামো ব্যবস্থাপনাকে আরও শক্তিশালী করেছে।

‘ইগিরি টু’ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রিড পরিকল্পনা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংযোজন বিষয়ে বিদ্যুৎখাতের চার শতাধিক পেশাজীবীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এ দেশের প্রথম ব্যাটারি এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম (BESS) লার্নিং ফ্যাসিলিটি স্থাপন করা হয়েছে এবং আটটি গ্রিড সাবস্টেশনে ফেজার মেজারমেন্ট ইউনিট (PMU) স্থাপন করা হয়েছে, যা রিয়েল-টাইম গ্রিড স্থিতিশীলতা মূল্যায়নকে আরও শক্তিশালী করেছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব জনাব ফারজানা মমতাজ বলেন, “বাংলাদেশ বর্তমানে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার সামগ্রিক আধুনিকায়ন, ডিজিটাল রূপান্তর এবং পরিচ্ছন্ন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সমাধান সংযোজনের ওপর প্রাধান্য দিচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের লক্ষ্য একটি দক্ষ, নির্ভরযোগ্য ও আর্থিকভাবে টেকসই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যার মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি মিশ্রণের দিকে রূপান্তরের প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত হবে।”

অনুষ্ঠানে প্রকল্পের সহযোগী অংশীদারদের অভিমত উপস্থাপন করা হয়, যার মধ্যে ছিল পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ, ডিপিডিসি, ওজোপাডিকো, নেসকো এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি খাতের প্রযুক্তি অংশীদাররা।

প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ডিজিটাল টুল ও লার্নিং ফ্যাসিলিটিগুলো বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনাকে কীভাবে রূপান্তর করছে – তা নিয়ে অংশীজনরা আলোচনা করেন।

‘ইন্টিগ্রেশন’ থেকে ‘স্মার্ট ম্যানেজমেন্ট’-এ অগ্রসর হওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর সমবেত ঐকমত্যের মাধ্যমে আয়োজনটি শেষ হয়। নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত এই ফ্যাসিলিটিগুলোকে আগামী দিনের ডিজিটাল ও আঞ্চলিক গ্রিড ব্যবস্থাপনার সক্রিয় গবেষণাগার হিসেবে ব্যবহার করার অঙ্গীকার করেন অংশীদাররা।

সরকার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউএন-এসক্যাপসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।