হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) এবং হায়দ্রাবাদের নিজাম মীর ওসমান আলী খান
মো. মনিরুল ইসলাম
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

এক.
খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) (১৮৭৩-১৯৬৫) ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাঙালি মুসলমান জাগরণের একজন রেনেসাঁপুরুষ। ভারতবর্ষের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, শিক্ষা সংস্কারক, সাহিত্যিক, দার্শনিক, সমাজহিতৈষী ও সুফি সাধক হিসেবে তিনি সর্বজনবিদিত। তিনি অবিভক্ত বাংলা ও আসামের জনশিক্ষা বিভাগের শীর্ষ কর্তাব্যক্তি ছিলেন। অন্যদিকে মীর ওসমান আলী খান (১৮৮৬-১৯৬৭) ছিলেন ভারতীয় সম্রাজ্যের বৃহত্তম রাজ্য হায়দ্রাবাদের শেষ নিজাম। তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের সারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনী এবং এখন পর্যন্ত সমগ্র ভারতের সর্বকালে শ্রেষ্ঠ ধনী মানুষ।
আলোচ্য দু’জনের একজন অবিভক্ত বাংলা ও আসামের শিক্ষা বিভাগের শীর্ষ কর্তা আর একজন হায়দ্রাবাদের নিজাম ও সারা পৃথিবীর শীর্ষ ধনী। কর্মপরিধি ও প্রকৃতির বিস্তারগত পার্থক্য থাকলেও তাঁরা দুজন সমসাময়িক, দুজনই শিক্ষানুরাগী এবং দুই পৃথক অঞ্চলে অন্তত শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্নির্মাণে দুজনই খুব প্রভাবশালী ছিলেন। দুজনের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল, শিক্ষাভাবনায় পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং আন্তঃপরামর্শমূলক সম্পর্ক ছিল। তাঁরা দুজনই ব্রিটিশ ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় কার্যকর সংস্কার এনেছিলেন।
দুই.
ব্রিটিশ ভারতের শিক্ষাব্যবস্থায় একদম শিকড় থেকে শিখরে হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) কাজ করেছেন। সমগ্র চাকরিজীবন ব্যয় করেছেন শিক্ষকতা, শিক্ষা পরিদর্শন ও শিক্ষা প্রশাসনে। মাঠ পর্যায়ে শিক্ষাব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছেন, কেন্দ্র থেকে সমন্বয় করেছেন এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অসংখ্য সংস্কার করেছেন। ১৮৯৫ সালে এমএ পাস করার পর রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে সংখ্যাতিরিক্ত শিক্ষক হিসেবে তাঁর চাকরি জীবন শুরু এবং ১৯২৯ সালে অবিভক্ত বাংলা ও আসামের জনশিক্ষা বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) পদে তিনি তাঁর চাকরি শেষ করেছিলেন। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি শিক্ষা বিভাগের নানা দায়িত্ব পালন করেন। প্রথম ভারতীয় হিসেবে তিনি ইন্ডিয়ান এডুকেশন সার্ভিসভুক্ত (আইইএস) হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ভারতীয় মুসলমান হিসেবে তিনি সিন্ডিকেট মেম্বর হন, এর আগে পরে অনেকবার তিনি সেখানে সিনেট সদস্য হন।
ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের তৎকালিন প্রায় সবগুলো কমিটিতে তিনি শিক্ষা বিশেষজ্ঞ হিসেবে ভারতীদের প্রতিনিধিত্ব করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ১৯০৮ সালে ‘ফিমেইল এডুকেশন কমিটি অব ইন্ডিয়া’, ১৯১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য গঠিত ‘নাথান কমিটি’র ‘টিচিং সাব কমিটি’, ১৯১৪ সালে ‘হর্ণেল কমিটি’, ১৯১৭ সাল থেকে ত্রিশের দশকের শেষ পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেট-সিন্ডিকেট, ১৯১৮ সালে সিমলা শিক্ষা সম্মেলনসহ অবিভক্ত বাংলার অধিকাংশ শিক্ষা সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব, ১৯১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্পেশাল কমিটি’, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কোট মেম্বর’ (সিনেট) ইত্যাদি।
তাঁর অন্যতম শিক্ষা সংস্কার ছিল অবিভক্ত বাংলা ও আসামে পরীক্ষার খাতায় নামের পরিবর্তে রোল নম্বরের প্রবর্তন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত কিংবদন্তির ভূমিকা পালন, নিউ স্কিম মাদ্রাসা ও পৃথক মাদ্রাসা বোর্ড প্রবর্তন, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ সৃষ্টি, কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজসহ অবিভক্ত বাংলায় অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি, ফুলার, কারমাইকেল, টেলর হোস্টেলসহ অসংখ্য হোস্টেল প্রতিষ্ঠা, নারী ও মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র বৃত্তি পুনর্বণ্ঠনসহ নানা ব্যবস্থা ও বাস্তবায়ন।
একজন শিক্ষা সংস্কারকের পাশাপাশি তিনি দার্শনিক ও সাহিত্যিক হিসেবেও সমাদৃত। তাঁর রচনাবলির সংখ্যা প্রায় দেড়শত। এর মধ্যে দর্শন ও ইতিহাসের অনেকগুলো গ্রন্থ দেশ-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় শতবছর ধরে পাঠ্য। তিনি ১৯১১ সালে তিনি মখদুমী লাইব্রেরি নামে কলকাতার কলেজ স্কোয়ারে প্রকাশনা সংস্থাও গড়ে তুলেছিলেন। যে প্রকাশনা সংস্থাকে কেন্দ্র করে বাঙালি মুসলমানের সাহিত্যচর্চার একটি কেন্দ্রীয় বলয় সৃষ্টি হয়েছিল। বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেও তিনি এর সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯১৮-১৭ বর্ষে তিনি সাহিত্য সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং ১৯৪৭ সালে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৬০ সালে খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা তাঁর অসামান্য সাহিত্য অবদানের জন্য বাংলা একাডেমির প্রথম ফেলো মনোনীত হন।
এ সকল পরিচয়ের বাইরে হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) একজন সুফি সাধক হিসেবে সর্বজনশ্রদ্ধেয়। স্রষ্টার সাযুজ্য লাভে তিনি সত্যতা, পবিত্রতা ও প্রেমিকতায় আধ্যাত্মিক সাধনস্তরের অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন। এই আধ্যাত্মিক সাধনা ও সমাজসেবার দীপ্ত শপথে তিনি ‘স্রষ্টার এবাদত ও সৃষ্টের সেবায় ১৯৩৫ সালে বিশ্ববিখ্যাত ‘আহ্ছানিয়া মিশন’ প্রতিষ্ঠা করেন।
তিন.
মীর ওসমান আলী খান পূর্বতন ভারতীয় সাম্রাজ্যের বৃহত্তম রাজ্য হায়দ্রাবাদের (বর্তমান তেলেঙ্গানা, মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটক) রাজ্যের শেষ নিজাম। তাঁর উপাধি ছিল নিজামণ্ডউল-মুলক। তখনকার ভারতবাসীর মুখে তিনি নিজাম হায়দ্রাবাদী নামে বহুল পরিচিত ছিলেন। ১৯১১ সালে ২৫ বছর বয়সে তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন। তাঁকে ভারতের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ধনী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাঁর সম্পদ ছিল বর্তমান মার্কিন জিডিপির ২%। ১৯৩৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে পৃথবীর শ্রেষ্ঠ ধনী হিসেবে তাঁর প্রতিকৃতি প্রকাশিত হয়েছিল। ব্রিটিশ ভারতে একজন আধা-স্বায়ত্তশাসিত রাজা হিসেবে, তাঁর নিজস্ব টাকশাল ছিল, ছিল নিজস্ব মুদ্রা ব্যবস্থা। তাঁর একটি ব্যক্তিগত কোষাগার ছিল যেখানে অন্তত ১০০ মিলিয়ন সোনা ও রূপার সোনার মুদ্রা এবং আরও ৪০০ মিলিয়ন রত্ন ছিল। তাঁর সম্পদের প্রধান উৎস ছিল গোলকুন্ডা খনি, যা সেই সময়ে বিশ্বের একমাত্র হীরা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ছিল।
নিজাম নিজে সাধারণ জীবনযাপন করলেও তাঁর রাজ্যের প্রকাশভঙ্গিমার আভিজাত্য, রাজকীয় অভিলাশ, রুচি এবং আত্মমর্যাদা ছিল অনন্য। তাঁর রাজ্যাভিজাত্যেও অসংখ্য ঘটনা ভারতবাসী এখনো মনে রেখেছে।
তাঁর অফিসে জ্যাকব নামে একটি হীরা (আকারে কোহিনুরের চেয়ে বড়) পেপারওয়েট হিসেবে ব্যবহৃত হতো যার মূল্য প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলার। ১৯৪৭ সালে তিনি প্রিন্সেস এলিজাবেথের বিয়েতে সবচেয়ে দামী উপহারটি দেন নিজাম। উপহারটি ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে দামী হীরকমাল্য যা এখন বিট্রিশ প্রাসাদে নিজামী চেন নামে সংরক্ষিত রয়েছে। ১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী নিজামের কাছে অর্থনৈতিক সাহায্য প্রার্থনা করেন। তখন তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আকারের অর্থনৈতিক সাহায্য করে ভারতবাসীকে চমকে দিয়েছিলেন। সাহায্যের পরিমান ছিল পাঁচ হাজার কেজি সোনা এবং নগদ পঁচাত্তর লাখ টাকা!
ত্রিশের দশকের শুরুর দিকে নিজাম ওসমান আলী খান একবার ইংল্যান্ডে যান। কাজ শেষে তিনি পৃথিবীবিখ্যাত গাড়ি ‘রোলস রয়েস’র শো-রুমে ঢু মারলেন। তিনি হায়দ্রাবাদের রাজকীয় কাজের জন্য একটি রোলস রয়েস কিনতে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। কিন্তু ভারতীয় পরিচয় পাবার পর কোম্পানি তাঁর কাছে গাড়ি বিক্রি করলো না। তখন মূলত বিট্রিশ অভিজাতদের বাইরে, বিশেষ করে ভারতীদের কাছে এই অভিজাত গাড়ি বিক্রির অনুমতি ছিল না। এটি ছিল ব্রিটিশদের আভিজাত্যের অন্যতম প্রকাশ। কয়েক বছর পর যখন এটি ব্রিটিশদের বাইরে বিক্রি শুরু হয় তখন নিজাম অন্তত ৫০ টি রোলস রয়েস কিনে নেন। এবং ভারতে ব্রিটিশদের অবাক করে দিয়ে সবগুলো গাড়িই তিনি হায়দ্রাবাদের সুইপারদের দিয়ে দেন। গাড়ির চাকার সামনে-পেছনে ঝাড়ু বেঁধে সকালবেলা সুইপাররা হায়দ্রাবাদের রাস্তা পরিষ্কার করত! অপমানের বদলা নিতে তিনি ব্রিটিশদের দম্ভ দিয়ে হায়দ্রাবাদের রাস্তা পরিষ্কার করাতেন!
নিজামের সম্পদ ছিল যেমন বিরাট ও বিপুল, সে সম্পদ জনকল্যাণে ব্যবহার তিনি করতে তিনি ছিলেন মুক্তহস্ত। তিনি অত্যন্ত শিক্ষানুরাগী ছিলেন। তিনি তাঁর রাজ্যে শিক্ষাব্যবস্থার অভূতপূর্ব কল্যাণ সাধন করেন। তাঁর বাজেটের ১১ শতাংশ শিক্ষাব্যয়ের জন্য নির্ধারিত ছিল। তিনি সেখানে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা এবং দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। ১৯১৭ সালে তিনি হায়দ্রাবাদে ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া টেকনিকাল শিক্ষায়তন, আসাফিয়া লাইব্রেরি (বর্তমান স্টেট জেনারেল লাইব্রেরি), হায়দ্রাবাদ মিউজিয়াম (বর্তমান স্টেট মিউজিয়াম), টাউন হল, নিজামিয়া অবজারবেটরি, ওসমানিয়া জেনারেল হাসপাতাল, হায়দ্রাবাদ স্টেট ব্যাংক, বেগমপেট বিমানবন্দর এবং হায়দ্রাবাদ হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তৎকালিন ভারতের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার জন্য তিনি সবচেয়ে বড় ডোনেটর ছিলেন।
চার.
হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) এবং নিজামুল মুলক ওসমান আলী খান দু’জনের পরিচয় ঘটেছিল ১৯১১ সালে ব্রিটিশ দরবার দিবসে। দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এই দরবারে ব্রিটিশ সম্রাট পঞ্চম জর্জ এবং সম্রাজ্ঞী মেরি উপস্থিত ছিলেন। ১৯১১ সালে দরবার দিবসের অব্যবহিত পূর্বে আহ্ছানউল্লা মাত্র কয়েকদিন আগে শিক্ষা-অবদানে ব্রিটিশ প্রদত্ত খানবাহাদুর উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। প্রায় একই সময়ে তিনি ব্রিটিশ রয়্যাল সোসাইটি অব আর্টসের ফেলোও নির্বাচিত হয়েছেন। সে সময় খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.)-এর অফিসিয়াল পরিচয় ছিল ব্রিটিশ ভারতে বিভাগীয় শিক্ষা পরিদর্শক। অন্যদিকে একই বছর ১৮ সেপ্টেম্বর মীর ওসমান আলী খান নতুন নিজামুল মুলক হিসেবে হায়দ্রাবাদের রাজ্যভিষেক ঘটে।
ভারতবর্ষের দুই প্রান্তের দুই মুসলিম শিক্ষাহিতৈষী দরবার দিবসে আমন্ত্রণ পেলেন। সেখানেই সম্ভবত দু’জনের প্রথম পরিচয়। দরবার দিবসে এই দু’জন মুসলমান ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক সম্মানিত হন। এসময় ‘হু’জ হু ইন ইন্ডিয়া’ গ্রন্থে খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) এর অবদান ও কর্মজীবন প্রকাশিত হয় এবং দরবারে তাঁর সম্মানে সেই জীবনী পঠিত হয়। একই আয়োজনে নিজামকে ‘নাইট গ্রান্ড কমান্ডার অব দ্যা অর্ডার অব দ্য স্টার অফ ইন্ডিয়া’ হিসেবে ভূষিত করা হয়। তখন থেকে নিজাম হায়দ্রাবাদী এবং খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.)-এর সৌহার্দ ও বন্ধুত্বমূলক সম্পর্কের যাত্রা শুরু হয়। মীর ওসমান আলী খান খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) কে একজন কমিটেড এডুকেশন এক্সপার্ট এবং তখনকার সময়ে পিছিয়ে পড়া মুসলমান জাতির শিক্ষা উন্নয়নে একজন ডেডিকেটেড অফিসার হিসেবে জানতেন। এরইমধ্যে ১৯১৯ সালে খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা’র (র.) প্রথম ভারতীয় হিসেবে আইইএস হবার বিরল মর্যাদা ও গৌরব অর্জনের খবর নিজামুল মুলকের কানে গিয়েছে। ফলে স্বভাবতই হায়দ্রাবাদের শিক্ষা উন্নয়ন এমনকি সেখানকার শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে তিনি খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.)-এর পরামর্শ নিতেন।
শিক্ষা ব্যবস্থায় যেসব উদ্যোগ অবিভক্ত বাংলা ও আসামে খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) বাস্তবায়ন করতেন, হায়দ্রাবাদে একই ব্যবস্থা বাস্তবায়নে তিনি বেঙ্গল এডুকেশন সিস্টেমকে রেফার করতেন। আবার হায়দ্রাবাদ এবং ঢাকায় দু’টি পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা প্রচেষ্টার অভিজ্ঞতা বিনিময় তাঁদের আরও কাছাকাছি নিয়ে আসে।
ভারতবর্ষের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলমান শিক্ষানুরাগী শাসক ভারতবর্ষের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলমান শিক্ষাবিদকে নিজের রাজ্যের শিক্ষা উন্নয়নে কার্যকরভাবে সরাসরি সম্পৃক্ত করতে চাইতেন। ১৯২৯ সালে নিজামের প্রত্যাশার একটি মোক্ষম সুযোগ সৃষ্টি হয়। খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) এসময় অবিভক্ত বাংলা ও আসামের শিক্ষা বিভাগের পরিচালকের চলতি দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি চাকরিতে এক্সটেনশন চাইলেন না। তখনই মীর ওসমান আলী খান খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) কে হায়দ্রাবাদের শিক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণে আমন্ত্রণ জানালেন। খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) রাজনৈতিক সংশ্রব, রাজনৈতিক পদ বা দলাদলি পছন্দ করতেন না। ফলে তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষের, ধনী রাজার মন্ত্রী হবার আহ্বানকে অবলীলায় উপেক্ষা করলেন। নিজাম তখন ভারত সচিবে মধ্যস্থতায় আরেকবার তাঁর আহ্বান পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি হায়দ্রাবাদী নিজামের শিক্ষাব্যবস্থায় অব্যাহত পরামর্শ দানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মন্ত্রী পদ গ্রহণের অপারগতা প্রকাশ করেন।
আভিজাত্য ও আড়ম্বরের সাম্ভাব্য আয়োজনকে উপেক্ষা করে তিনি অনাড়ম্বর এক নিভৃত সাধনা জীবনকে বেছে নিয়ে ছিলেন। তিনি স্বজাতির প্রান্তিক মানুষের সেবা এবং আধ্যাত্মিকতার অন্তর্গত তাড়নায় শহর ছেড়ে জন্মভূমির গাও-গেরামে ফিরে এসছিলেন। শুরু করেছিলেন এক নতুন জীবন-সাধনা, মানবসেবার সাংগঠনিক প্রয়াসে তিনি শুরু করেছিলেন মুষ্টিভিক্ষা আর মানবমুক্তির শপথে উঁচুতে ধরে রেখেছিলেন মুষ্টিভিক্ষারই সেই মুষ্টিবদ্ধ হাত!
