যাদের বাঁ হাত বেশি সক্ষম তাদের বাঁহাতি বা লেফটি বলা হয়। কিন্তু তিমির বেলায় রাইট হোয়েল মানে কী? ওদের ডান হাত বা ডান পাখনা বেশি চলে? একেবারেই না! রাইট হোয়েলের পাশাপাশি লেফট হেয়েল বলে কিছু নেই। এই ‘রাইট’ বিশেষণটি আসলে শিকারিদের দেয়া। যেসব তিমি বা হোয়েল ধীর গতিতে চলাচল করে, তাদের শিকার করা সহজ, তাই তারা শিকারিদের কাছে শিকারের ‘সঠিক’ প্রজাতি বা রাইট হোয়েল। কথাটি নিষ্ঠুর হলেও সত্যি। এই রাইট হোয়েলদের আয়ু নিয়ে নতুন তথ্য মিলেছে। এরা ১৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাঁচতে পারে বলে উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণায়, যা আগে এদের যে বয়স ভাবা হত তার প্রায় দ্বিগুণ। গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ। সাম্প্রাতিক এই আবিষ্কার দীর্ঘজীবী প্রাণীর তালিকায় রাইট হোয়েলকে যুক্ত করেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানবিষয়ক খবরের সাইট নোরিজ। গবেষণায় ছবি শনাক্তকরণ প্রোগ্রাম থেকে চার দশকের ডেটা বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা। এতে আলাদা আলাদা তিমির তথ্য রয়েছে। গবেষণায় তিমির দুটি প্রজাতির উপর নজর দিয়েছেন গবেষকরা। একটি দক্ষিণ মহাসাগরে পাওয়া দক্ষিণের রাইট হোয়েল ও উত্তর আমেরিকার আটলান্টিক উপকূলে বসবাসকারী বিপন্ন উত্তর আটলান্টিক রাইট হোয়েল। ছবি শনাক্তকরণ প্রোগ্রামের তথ্য ব্যবহার করে এই দুই প্রজাতির তিমির বেঁচে থাকার গ্রাফ তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এতে দেখা গেছে, একসময় ভাবা হতো দক্ষিণের রাইট হোয়েলরা কেবল ৭০ থেকে ৮০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতো।
কিন্তু এরা ১৩০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এমনকি কিছু তিমির আয়ু দেড়শ বছর পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। অন্যদিকে, উত্তর আটলান্টিকের রাইট হোয়েলের গড় আয়ু কেবল ২২ বছর। এই প্রজাতির খুব কম তিমিই ৫০ বছরের বেশি বেঁচে থাকে। এ গবেষণার প্রধান লেখক ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস’-এর সহযোগী অধ্যাপক গ্রেগ ব্রিড বলেছেন, উত্তর আটলান্টিকের রাইট হোয়েলদের আয়ু কম হওয়ার প্রধান কারণ মানুষের কার্যকলাপ। ‘এসব তিমি প্রায়শই মাছ ধরার সরঞ্জামে জড়িয়ে যায়, জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা খায় বা পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে খাবার পায় না। এরকম অনেক কারণই থাকতে পারে যা আমরা পুরোপুরি বুঝতে পারছি না। বিষয়টি কেবল জৈবিক পার্থক্যের কারণে নয়- এদের আরো অনেক দিন বেঁচে থাকার কথা।’ উত্তর আটলান্টিকের রাইট হোয়েলদের সংখ্যা পুনরুদ্ধারে কত সময় লাগতে পারে তাও এই গবেষণায় তুলে ধরেছেন গবেষকরা। ব্রিড বলেন, ‘বয়স্ক প্রাণীদের সঙ্গে সংখ্যা পুনরুদ্ধারে কয়েকশ বছর সময় লাগতে পারে। রাইট হোয়েল প্রতি ১০ বছরে কেবল একবার জীবিত বাচ্চার জন্ম দেয়। ফলে এদের সংখ্যা বৃদ্ধি হয় অনেক ধীর গতিতে।’ গবেষণা দলটি অন্যান্য তিমি প্রজাতি নিয়েও গবেষণার পরিকল্পনা করেছেন। যাতে তাদের জীবনকালকেও অবমূল্যায়ন করা হয় কি না এবং তিমি শিকারের ফলে এদের সংখ্যা কীভাবে প্রভাবিত হয় সে সম্পর্কে আরো জানার পরিকল্পনা রয়েছে গবেষকদের।