তারেক হাসানের কবিতা

প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

দেখেছি

দেখেছি আমি গ্রীষ্মের খরতাপ

দেখেছি কালবৈশাখী ঝড়,

দেখেছি আমি খুব কাছের মানুষ

বন্ধন ছিড়ে কীভাবে হয় পর।

দেখেছি আমি বর্ষার জল

দেখেছি শ্রাবণের বারিধারা,

দেখেছি আমি পাগল প্রেমিক

কীভাবে হয় ঘরছাড়া।

দেখেছি আমি শরতের কাশবন

দেখেছি শিউলির অভিমান,

দেখেছি আমি স্বার্থপর মানুষে

কীভাবে দেয় প্রতিদান।

দেখেছি আমি হেমন্তের নবান্ন 

দেখেছি হৈমন্তীর পথচলা,

দেখেছি আমি মরা বৃক্ষরাজির

ভারাক্রান্ত মনে কথা বলা। 

দেখেছি আমি শীতের কুয়াশা

কীভাবে শিশির হয় ঘাসে,

দেখেছি আমি বোকা বানিয়ে 

সে খিলখিলিয়ে হাসে।

দেখেছি আমি বসন্ত কোকিল

শুনেছি কত কুহুতান,

দেখেছি আমি ছলনার ফাঁদে 

ঝরে গেছে কত প্রাণ।

সে তো ভালোবাসা নয়

বোবা হয়ে গেছি সেদিনি, 

যেদিন বাঁশের সাঁকো পার হয়ে 

আমার সামনে এসে দাঁডিয়েছিলে

তোমার অপরাধী মন নিয়ে।

আমি ছিলাম নিরেট পাথরের মূর্তি

তুমি হাতজোড় করে মিনতি করেছিলে,

যেন ভুলে যাই সমস্ত অতীত স্মৃতি 

পরম সুখের আরাধনায় তাই বলেছিলে।

আমি অন্ধ হয়েছি সেদিনি দ্বন্দ্ব বাড়াতে চাইনি

তোমার বধূ সাজ এ দু’চোখে দেখিনি,

তুমি রঙিন স্বপ্নে বিভোর, সুখী হতে

তাই তোমার অপরাধী চোখে চোখ রাখিনি। 

তুমি বধির হয়ে গেছ সেদিন

তাই আমার পাঁজর ভাঙার শব্দ শুনোনি,

সত্যিই তুমি আমার প্রিয়তমা ছিলে না বলে

আমার ভালোবাসার পরিধি কত তা তুমি বোঝনি।

জানি না আমি পুরুষ?

রাতের আঁধার শেষে ভোরের যে সূর্যটা উঠে 

সেটা আমার জন্য নয়, সে আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয়

নিত্যপ্রয়োজন পুরুষ এমনি হয়।

হে পুরুষ তোমার ক্লান্তি থাকতে নেই- তুমি পুরুষ 

তাই তো তোমার মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ কেউ দেখে না

দেখে দিন শেষে তুমি কতটুকু চাহিদা মেটাতে পেরেছ

পরিবার পরিজনের কাছে! তা লিপিবদ্ধ থাকে না।

আসলে তুমি সবার কথায় শুনতে থাকো আর

তোমার বুকের ভেতরে কত যন্ত্রণার মহাপ্রলয়, 

তুমি দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে যাও সমস্ত কিছু

তোমার পরাণে আর কত সয়? ক্ষয় আর ক্ষয়।

দিন শেষে কেউ কি বলেছে তোমায় কেমন আছ?

তোমার শরীরটা ভালো তো? কি এনেছ তা জানতে চায়,

আসলে তুমি পুরুষ বলেই সন্তানের সামনে বলতে পার না, 

তুমি এক বাবা, মরণব্যাধি নিয়েও কতটা অসহায়।

হে পুরুষ তুমি যে স্বপ্নের জাল বুনেছিলে তা কতটা স্বার্থক!

পেয়েছ কি সেই সুখ স্বপ্নের ঠিকানা, 

অবশেষে তোমাকে কাপুরুষের মতো মুখ লুকিয়ে বলতে হয় 

জানি না- সুখ কাকে বলে? আমি জানি না-

মানুষ হয়ে যেতাম

সত্যিই আমি কবি হয়ে যেতাম

যদি আমার বিশ্বাসের নিঃশ্বাসটুকু

তোর কাছে বন্ধক না রাখতাম,

সত্যিই আমি গায়ক হয়ে যেতাম

যদি এই ঠোঁটে তুই চুম্বন না দিতি,

কারণ কণ্ঠনালিতে স্বর থাকলেও

ঠোঁট দুটো মুহূর্তেই পাল্টে ফেলে গীতি।

সত্যিই আমি মানুষ হয়ে যেতাম

তোর মনের ভেতর আমাকে পেতাম।

সত্যিই তুই আমার ছিলি না বুঝেও

অবুঝের মতো বড্ড বেশি ভালোবাসতাম।