মিষ্টিগানের শিসটি সুরে
বাংলাদেশের দৃষ্টি জুড়ে
তার ছবিটা ভাসে
শিল্পী-কবি তারই গুণে
ইতিহাসের গল্প বুনে
গান-কবিতায় হাসে।
তারই ডাকে দোয়েল ডাকে বৃক্ষ ওঠে দুলে
লাল-সবুজের প্রজাপতি বেড়ায় ফুলে ফুলে।
তারই ডাকে একাত্তরে সবাই দাঁড়ায় রুখে
বীরের মতো লড়াই করে নেয় যে গুলি বুকে।
তিনি হলেন জাতির পিতা মহান মুজিবুর
বাংলাদেশের হাওয়ায় ভাসে যাঁর চেতনার সুর।
এ সুন্দর, মিষ্টি কবিতাটি পড়তে পড়তে নবরাজ ভাবতে থাকে। আর আম্মুকে বলে। আম্মু। আম্মু। বঙ্গবন্ধু কে ছিলেন?
উনি কী একজন শিক্ষক ছিলেন?
কবি ছিলেন। নাকি একজন খ্যাতিমান মনীষী ছিলেন।
নবরাজের আম্মু তখন ফিক করে হেসে উঠে বলেন, তিনি আমাদের স্বাধীনতার স্থপতি। পৃথিবীতে কেউ কাউকে স্বাধীনতা দিতে চায় না। স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে হয়। আদায় করে নিতে হয়।
শোনো বাবা উনি দেশ গড়ার কারিগর।
উনার জন্য আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।
হাঁটতে শিখেছি। মুক্ত মনে কথা বলতে শিখেছি।
পাখি যখন আকাশে উড়ে বেড়ায়। তখন সে স্বাধীনভাবে উড়ে বেড়ায়। আর খাঁচায় যখন বন্দি করে রাখা হয়, তখন সে স্বাধীন থাকে না। তার মন বেজায় খারাপ থাকে। কষ্টে থাকে। চুপচাপ বসে থাকে। পাখা ঝাপটায় না। আরো কত কী সমস্যা হয়। ইচ্ছেমতো গান গাইতে পারে না। বুঝেছ, বুঝেছ আমার কথা। নবরাজ মাথা দোলায় হ্যাঁ মা আমি বুঝতে পেরেছি তোমার কথা।
তেমনিই বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীন করেছেন পাকিস্তানের হাত থেকে। ওরা আমাদের শাসন করত ইচ্ছে মতো। কথা বলতে দিত না। ১৯৫২ সালে আমাদের মাতৃভাষার ওপর তাদের উর্দুভাষা চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল, যাতে করে আমরা উর্দু ভাষায় কথা বলি। উর্দু ভাষায় লিখি।
তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ অনেক ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন গড়ে তোলেন। পাকিস্তানি আর্মি আমাদের ভাইদের ওপর গুলি চালায়। অনেক ছাত্র আহত হয়। তখন বরকত, জব্বার, শফিক, রফিসহ আরও কয়েকজন ছাত্রসহ সাধারণ মানুষ শহীদ হয়।
তারপর ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে যুদ্ধ হয়। লাখ লাখ প্রাণের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা লাভ করি।
দেখ না নবরাজ। তোমার সঙ্গে কত সুন্দর করে গল্প করি। তোমাকে অনেক কিছু উপহার দিতে পারি।
নবরাজ মায়ের কথা শোনে। ফ্যাল ফ্যাল করে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আর বলে, আচ্ছা আমাদের নানাভাই তো রমিজ উদ্দিন। তা, উনি কি তাহলে ১৯৭১ সালে শহীদ হয়েছিলেন? সে জন্যই কী শহীদ রমিজ উদ্দিনের বাড়ি বলে আমাদের নানাবাড়িকে।
আম্মা তখন বলেন হ্যাঁ, বাবা। সে জন্যই সবাই শহীদ রমিজ উদ্দিনের বাড়ি বলে। এর ফাঁকে নবরাজের আম্মুর চোখে পানি এসে যায়। টপটপ করে দুই ফোঁটা, তিন ফোঁটা করে অশ্রু ঝরতে থাকে। তিনি দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে থাকেন।
নবদের সামনের রুমের দেওয়ালে নানার ছবিটি বাঁধানো। অনেক বড় বড় চুল। মুখে অল্প দাড়ি। ওর নানা সাংবাদিক ছিলেন। নামকরা সাংবাদিক। সাহসী সাংবাদিক। কখনও অন্যায়ের কাছে মাথানত করতেন না। বঙ্গবন্ধু রমিজ উদ্দিনকে খুবই ভালো বাসতেন। একবার খুশি হয়ে সোনার কলম উপহার দিয়েছেন। আর বলেছেন, রমিজ উদ্দিন তুমি একজন কলমযোদ্ধা। আমাদের এই দেশের জন্য তোমাকে খুবই প্রয়োজন।
নব আম্মুর দিকে চেয়ে বলল, আম্মু, আমাদের নানাভাই খুব বড় সাংবাদিক ছিলেন। খুবই সাহসী মানুষ ছিলেন তাই না!
নবরাজের মা জবাব দিলেন হ্যাঁ বাবা। খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ খবর লিখতেন কাগজে।
ওনার স্বপ্ন ছিল আমাদের এ সমাজের, দেশে কোনো অন্যায় অবিচার থাকবে না। সব মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে।
নব আম্মুকে বলল আম্মু আমি বঙ্গবন্ধুর গ্রামের বাড়ি যাব।
উনি কোন গ্রামে বড় হয়েছেন কেমন ওনার গ্রাম? মানুষগুলো দেখতে কেমন যেন।
আম্মু তখন নবকে বলে শোনো বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। উনার গ্রামে আছে মধুমতি নদী। সেই নদীতে আমরা নৌকায় চড়ব।
তোমার স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি দিলে তোমাকে নিয়ে যাব। তার গ্রামটা ঘুরে ঘুরে দেখব। সেখানে বঙ্গবন্ধুর মাজার আছে, জাদুঘর আছে, লাইব্রেরি আছে, সেই গ্রামে সবাই অনেক ভালো মানুষ। মিলেমিশে থাকে। মারামারি করে না। চারদিকে শাপলা বিলে পাখপাখালি।
সেখানে শাপলাফোটা বিল আছে। আছে অনেক পাখি, পাখির গানে প্রকৃতি মুগ্ধ হয়ে থাকে। আর নদীতে রংবেরঙের পাল তোলা নৌকাÑ সেসব দেখে তুমি খুব আনন্দ পাবে।
মায়ের কথা শুনে ছোট্ট নবরাজ ভাবতে থাকে কখন স্কুল ছুটি হবে, তার আম্মুর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি যাবে।